বাংলাদেশ সরকারের ফ্রি ফেসবুক ও মেসেঞ্জার বন্ধ করাকে কিভাবে দেখেন?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফ্রী ফেসবুক নিয়ে৷গত ১৭ জুলাই রাত ১২ টা থেকে হঠাৎ করে বাংলাদেশের কতিপয় লোকের মাথায় রীতিমতো বাজ পড়ার দশা৷ কারণ তাদের বহুল ব্যবহৃত ফ্রি মেসেঞ্জার কিংবা ফেসবুক আর চলছে না৷ কারণটা তখন পর্যন্ত জানত না অনেকে৷ পরে বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ ও স্টোরির মাধ্যমে জানা গেল যে সকল টেলিকম প্রতিষ্ঠানকে বিটিআরসি থেকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছে যে ইন্টারনেটের সকল ধরনের ফ্রি সেবা বন্ধ করতে হবে৷
বাংলাদেশের বাচ্ছাদের ক্লাস ফাইভ পাস করলেই তাদের একটা করে ফেসবুক আইডি আর একটা করে ফেক আইডি থাকতে হবে৷ ছেলেমেয়ে থেকে আশি বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত একটা করে ফেসবুক আইডি থাকা অবধারিত৷ আর যেহেতু ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ফ্রী তাই ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে তাকে চালাতে হবে৷ চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বিশ ঘন্টা একটিভ থাকতে হবে৷ পোস্ট দিতে হবে, লাইক করতে হবে, পেতে হবে, কমেন্ট করতে হবে, স্টোরি দিতে হবে, পাঁচ সাতটা ফেসবুকীয় প্রেম থাকতে হবে, পেজ,গ্রুপ খুলতে হবে, তাতে গণহারে সবাইকে ইনভাইট করতে হবে, মেসেঞ্জারে গ্রুপ থাকতে হবে( শিক্ষাবিষয়ক গ্রুপ থেকে পর্ণ গ্রুপ পর্যন্ত কত যে useless গ্রুপ থাকে তা বলার বাহিরে) আর ঘন্টায় ঘন্টায় বিভিন্ন ভঙ্গিতে আকৃতিতে ছবি পোস্টানো তো আছেই৷ বিশেষত ফেসবুকীয় প্রেম নামক ফেক একটা জিনিসের পিছনে কত ছেলেমেয়ে যে তার জীবনের সবকিছুকে হারাচ্ছে তার হিসাব কে দিবে? এবার আমাকে বলুন এদের মধ্যে জাতি বা আপনার জন্য উপকারি কোনটা? উন্নত বিশ্বে লোকেরা যেখানে ফেসবুককে ব্যবসা ও শিক্ষার প্রসার এবং কাজের ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করে সেখানে আমরা আসলে কি নিয়ে ব্যস্ত থাকি বিষয়টা একটু ভেবে দেখলেই বুঝা যাবে ফ্রি ফেসবুকের ও ইন্টারনেটের গুরুত্ব৷
*বিটিআরসিকেও পুরো বাংলাদেশের নেট জগতকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়৷ এখন তারা নিশ্চয়ই চাইবে নিয়ন্ত্রণ করাটাকে যতটা সম্ভব নিরঙ্কুশ ও নির্ভেজাল করতে৷ আর তারা সেটাই করেছে৷ আর তাছাড়াও তারা অনেকদিন থেকেই চাইছিল ফেসবুকে বা অন্যান্য নেটের সার্ভিসে জনগনের বিশেষত শিক্ষার্থীদের সময় দেয়াকে কমিয়ে আনতে৷ এজন্য এর আগে রাত ১২ টার পর ফেসবুক বন্ধ,পাবজি বন্ধ ইত্যাদি অসংখ্য পদক্ষেপ তারা নিয়েছে৷ এবার বড়সড় কোন পদক্ষেপ ফেলল তারা৷ তবে হা, দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফ্রী করে দিতে পারত তারা৷ যদিও তাতে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হত৷
* ফ্রি ফেসবুক বন্ধ হওয়া নিয়ে ইতোমধ্যেই বরাবরের মত কয়েকটিপক্ষ তৈরি হয়ে গেছে৷ প্রত্যেকের যুক্তিগুলোও কম জোরালো নয়৷ আমি সেই যুক্তিগুলো খন্ডাতে যাব না৷ কিন্ত একটু কল্পনা করুন যে আপনার কয়েকজন বন্ধু মিলে কোথাও আড্ডা দিচ্ছেন আর আপনার বন্ধুরা সমানে ফ্রি ফেসবুকের কল্যাণে মেসেঞ্জারে গুতাচ্ছেন৷ (বলছি না যে নেট দিয়ে চালালে সেটা থাকবে না৷ থাকবে, কিন্ত সম্ভাবনাটা অনেক কমে যাবে) বিষয়টার সম্মুখীন আপনি কতবার হয়েছেন আর কতবার মেনে নিবেন?
*শিক্ষার্থীরা হয়ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এতে৷ কারণ তাদের নেট কেনার সামর্থ্য নেই৷ কিন্ত আখেরে বেশি লাভবানও হবে তারা৷ কারণ তাদের সবচেয়ে মূলবান যা, সেই সময়টা বেচে যাবে বহুগুনে৷ তারপর সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে সে শুধু নেট না নেটের নানা নানীকেও কিনে নিতে পারবে যদি সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারে৷ কারণ “সময়কে অবহেলা করলে সে আপনার পুরো জীবনকেই কেড়ে নিবে৷ আর কাজে লাগালে সে বহুগুন আপনাকে ফিরিয়ে দিবে৷”
*হা প্রতিটা কাজেরই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে৷ এক্ষেত্রেও হয়েছে আর হবেও৷ তবে কলরেট বাড়ানোটা যখন আপনার সয়ে গিয়েছে একসময় এটাও যাবে চিন্তা করিয়েন না৷