আমার চাপ দাড়ি ওঠে না কেন?
দাড়ি- আকর্ষনীয় পুরুষদের এক অনবদ্য অংশ। প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন সমাজে চলে আসছে দাড়ি রাখার প্রচলন।
এমনকি বিংশ শতাব্দীতেও অনেক সমাজে দাড়ি কাটা রীতিমত অপরাধ ছিল। অনেক সংস্কৃতিতে দাড়িকে আবার পুরুষত্বের চিহ্ন হিসেবেও ধরা হয়। শুধু সমাজ বা সংস্কৃতি নয় প্রতিটি পুরুষের মনেই থাকে দাড়ি নিয়ে হাজার রকমেক চিন্তা। কিশোর বয়স থেকেই ছেলেদের মনে শুরু হয় দাড়ি নিয়ে এই যল্পনা-কল্পনা। কে কেমন দাড়ি রাখবে? কার দাড়ি কত ঘন? কিভাবে শেভ করলে আকর্ষনীয় দেখাবে? আরও কত কী।
চিকিৎসকদের সংজ্ঞায় বলতে গেলে..
1.দাড়ি না ওঠার যত কারণ
অনেক মেয়েরাও ঘন দাড়িওয়ালা ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে সকল ছেলেদের দাড়ি উঠে না তাদেরকে বন্ধুমহলে কতই না মসকারার শিকার হতে হয়। এই মসকরার শিকার হয়ে অনেক ছেলেই লেগে পড়ে দাড়ি উঠানোর পেছনে।
বেশি বেশি শেইভ করা, বিয়ার্ড ওয়েল লাগানো, বিভিন্ন ওষুধ ও ট্রিটমেন্ট নেয়া আর কত কী। কিন্তু কোনদিন কী ভেবে দেখেছেন কেন দাড়ি নিয়ে এই বৈষম্য? কেনই বা কিছু কিছু পরুষের দাড়ি উঠে না?
দাড়ি না ওঠার অনেক কারণ হতে পারে। কিছু কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে এটি জেনেটিক। আমাদের জিন শরীরের গঠন, রঙ, স্বভাব চরিত্র নির্ধারণের মত লোম বা দাড়ি চুল ওঠাও অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করে থাকে। বংশগত ভাবেই এই জিনের প্রবাহ চলতে থাকে এবং একই বংশের মানুষদের চেহারা, স্বভাব-চরিত্র আকৃতি প্রায় একই রকম রাখে। একারণেই অনেক সময় দেখা যায় কোনো বংশের পুরুষদের দাড়ি ওঠার প্রবনতা কম। আবার কোনো কোনো বংশের পুরুষদের দাড়ি ওঠার প্রবনতা বেশি।
তবে দাড়ি না ওঠার মূল কারণ হলো টেস্টেসটেরন। মানব শরীরের অনেকগুলো প্রয়োজনীয় হরমোনের মধ্যে একটি হলো এই টেস্টেসটেরন। মেয়েদের শরীরে টেস্টেসটেরন এর প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি না হলেও প্রতিটি পুরুষের জন্যই এই হরমোন অনেক প্রয়োজনীয়। প্রজনন অংগ থেকে শুরু করে পুরুষ শরীরে গঠন সবকিছুর পেছনেই এই হরমোন কাজ করে। শরীরের লোম চুল এমনকি দাড়ি ওঠার পেছনেও টেস্টেসটেরনই মূল ভুমিকা কাজ করে। তবে টেস্টেসটেরনের ঘাড়তিই কি কিছু কিছু পুরুষের দাড়ি না ওঠার কারণ?
না, টেস্টেসটেরনের ঘাড়তি দাড়ি না ওঠার কারণ নয়। প্রতিটি পুরুষের শরীরেই প্রায় সম পরিমান টেস্টেসটেরন থাকে। দাড়ি বা শরীরে লোম ওঠা বা এর ঘনত্ব নির্ভর করে কোন পুরুষের শরীর কিভাবে এই টেস্টেসটেরনের ওপর প্রতিক্রিয়া করে। পুরুষদেহের চামড়ার নিচ থেকে রক্তের মত এই হরমোন ও প্রবাহিত হয়। এই হরমোনেরই আরেকটি সাবসট্যান্স ডাইহাইড্রোটেস্টেসটেরন। টেস্টেসটেরনের এই সাবসট্যান্সটি যেসকল পুরুষের লোমকূপ থেকে প্রবাহিত হয়ে দাড়ি বা লোমে প্রবেশ করে তাদেরই দাড়ি উঠে।
ডাইহাইড্রোটেস্টেসটরেন এই প্রবাহ দাড়ি বা লোমের ঘনত্বও নির্ধারণ করে। যেসকল পুরুষের এই প্রবাহ বেশি হয় তাদের দাড়ি ঘন। আবার যাদের কম তাদের দাড়ি কম ঘন। শরীরের বিভিন্ন অংশে লোম ওঠাও এই হরমোনেরই অবদান। যেসকল অংশে এর প্রবাহ বেশি সেখানে লোম ওঠার গ্রবনতাও বেশি। কিন্তু এই ডাইহাইড্রোটেস্টেসরনের প্রবাহ কম হওয়া কী কোনো শারীরিক সমস্যা?
না, টেস্টেসটেরনের প্রবাহ কম হওয়াটা বা দাড়ি কম ওঠা কোনটাই শারিরীক সমস্যা নয়। এমনকি দাড়ি দিয়ে পুরুষত্ব ঠিক করাটাও একটি ভূল ধারণা মাত্র। টেস্টেসটেরন পুরুষত্ব নির্ধারণ করে দাড়ি নয়। এই প্রাবাহ অনেক ক্ষেত্রে বংশগত আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক গঠন বা ত্বকের প্রকৃতির ওপর নির্ধারণ করে।
তবে দাড়ি উঠানোর জন্য বিভিন্ন ওয়েল, ওষুধ সেবন ও ট্রিটমেন্ট নিলে বিপদের শিকার হতে পারেন। এসকল ট্রীটমেন্টের অনেক পার্শ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ত্বকে পার্মানেন্ট দাগ, ব্রোন বেড়ে যাওয়া আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিভারেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি দাড়ি ওঠানোর জন্য বার বার সেভ করাও দাড়ি বাড়ায় না। এতে শুধুমাত্র পুরাতন দাড়ির জায়গায় নতুন দাড়ি উঠে কিন্তু টেস্টেসটেরনের প্রবাহ বাড়ায় না।
তাই পরবর্তীবার দাড়ি উঠানোর জন্য ট্রিটমেন্ট বা শেভ করার পূর্বে অবশ্যই চিন্তা করে নিবেন।
ধন্যবাদ💙