বিমানের ভাড়া এতো বেশি হয় কেন?
১) নিচের সমস্ত তথ্য মোটের উপরে নেয়া। দেশভেদে, বিমানভেদে এবং ফ্লাইটের ডিউরেশনভেদে খরচ এদিক সেদিক হতে পারে।
২) এয়ারবাস A-320 কে এখানে মডেল ধরে খরচের হিসাব করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন বিমানের জন্য খরচও ভিন্ন রকম।
৩) বেশ কিছু খরচের হিসাব ২০১৪ এবং ২০১৬ এর আলোকে নেয়া। বর্তমান খরচ তাই আরও বেশী হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এবার চলুন মূল উত্তরে যাওয়া যাক।
বিমান ভাড়া বেশী হওয়ার পিছনে আসলে বেশ কয়েকটি যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এয়ারলাইন্সগুলোর খরচের দিকে যদি আমরা একটু তাকাই, তাহলে বিষয়টি অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যাবে।
- বিমানের দাম একটি বড় বিষয়।
যদি এয়ারবাস A-320 এর কথা বলি, এটির যাত্রী ধারণক্ষমতা হল ১৫৪ জন এবং এটির দাম প্রায় ১০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। ধরা হয়ে থাকে বিমানগুলো প্রায় ৬০ হাজার বার ওঠানামা করতে সক্ষম , সেক্ষেত্রে ফ্লাইট প্রতি খরচ পড়ে প্রায় ১৭৮৩ মার্কিন ডলার। সুতরাং একটি ‘হাউজফুল’ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতি যাত্রীদের মাথাপিছু খরচ পড়ছে প্রায় সাড়ে ১১ ডলার।
- বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ
একটি ফ্লাইটের আগে পরে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের পিছনে ২০০০ ডলারের আশেপাশে খরচ হয়, যার ফলে যাত্রীদের মাথাপিছু খরচ পড়ে প্রায় ১৪ ডলার।
- পাইলট এবং ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের বেতন
একজন পাইলট বাৎসরিক গড়ে ৭০ হাজার মার্কিন ডলার বেতন পেয়ে থাকেন। (এটি বিমানের উপরে অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলাদেশে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স এর ড্যাশ 8 এর পাইলটরা বছরে প্রায় ৩০ হাজার ডলারের মত বেতন পান, আবার ‘বিমান’ এর বোয়িং ৭৭৭ এর পাইলটরা বছরে প্রায় ১ লাখ ডলার বেতন পান।) এক বছরে যদি তিনি ১৮০০ ঘন্টা বিমান চালনা করেন, সেক্ষেত্রে ফ্লাইট ঘন্টাপ্রতি তিনি ৩৯ ডলার পাচ্ছেন (বাৎসরিক ৭০ হাজার মার্কিন ডলার হিসেবে)। কো-পাইলট বা ফার্স্ট অফিসার পাইলটের প্রায় অর্ধেক কিংবা ৬০% বেতন পেয়ে থাকেন। সুতরাং পাইলট এবং কো-পাইলটদের বেতন বাবদ এয়ারলাইন্স এর ঘন্টাপ্রতি খরচ পড়ে প্রায় ৬০ ডলার। ১ জন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট এর ঘন্টাপ্রতি বেতন প্রায় ১৫ ডলার। এয়ারবাস A-320 তে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট থাকেন সাধারণত ৪ জন। ফলে তাদের বেতন দাঁড়াচ্ছে ঘন্টাপ্রতি ৬০ ডলার। তাহলে ঘন্টাপ্রতি এঁদের বেতন বাবদ যাত্রীদের মাথাপিছু খরচ পড়ছে ১ ডলার এরও কম।
- যাত্রীদের খাবার
লম্বা ফ্লাইটে যাত্রীদের ২ বার এবং ছোট ফ্লাইটে ১ বার খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। এখানে যাত্রীপ্রতি প্রতিবারে প্রায় ৫ ডলারের মত ব্যয় হয়।
- এয়ারপোর্ট ব্যাবহারের জন্য চার্জ
প্রত্যেক বিমানবন্দর প্রতি ১০০০ পাউন্ড/কেজি ভর টেইক অফ এর জন্য বিভিন্ন পরিমাণ টাকা চার্জ করে থাকে। বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১০ হাজার কেজি ভরের নিচে প্রতি হাজার কেজিতে ৫’২৫ ডলার চার্জ করে থাকে। বিভিন্ন টেইক অফ ওয়েট এর রেঞ্জ অনুযায়ী এই চার্জেরও হেরফের হয়। DAC (হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) এর এই চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এখানে। এয়ারবাস A-320 এর সাধারণ টেইক অফ ভর থাকে প্রায় ৮০ হাজার কেজি। সে হিসাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি এয়ারবাস A-320 এর উড্ডয়নবাবদ খরচ পড়ে প্রায় ৭৮০ ডলার। ফলে যাত্রীপিছু খরচ পড়ছে ৫ ডলার।
- ট্যাক্স ট্যাক্স এবং ট্যাক্স
এয়ারলাইন্সদের এয়ারপোর্টে বিমান রাখা বাবদও একটি অর্থ প্রদান করতে হয়। এছাড়াও ট্রাভেল ট্যাক্স, কার্বন ট্যাক্স, সার্জ চার্জ ইত্যাদি নানান রকম ট্যাক্স দেয়া বাবদ এয়ারলাইন্সগুলোর একটি বড় এমাউন্টের অর্থ চলে যায়।
- ফুয়েল
খুব বড় খরচের জায়গা মনে হলেও যাত্রীপিছু ফুয়েল খরচ আহামরি কিছু না। একটি এয়ারবাস A-320 প্রতি গ্যালন ফুয়েলে প্রায় ‘৬৭ মাইল যেতে পারে। আমেরিকান ব্যুরো অফ ট্রান্সপোর্ট স্ট্যাটিস্টিক্স অনুযায়ী আমেরিকান এয়ারলাইন্সগুলো গড়ে গ্যালনপ্রতি মাত্র ১’২৪ ডলার ব্যয় করে থাকে।
- এয়ারলাইন্স এর অফিস এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ খরচ
এই জিনিসটির সঠিক ধারণা করা আসলে খুবই কঠিন, কারণ বিভিন্ন দেশে শ্রমের মূল্য বিভিন্ন রকম। তবুও মোটামুটিভাবে বলা যায় এর পিছনে যাত্রীপিছু খরচ হয় প্রায় ১০ ডলার।
- বিমানের ইন্স্যুরেন্স
এয়ারবাস A-320 এর ইন্স্যুরেন্স বাবদ এয়ারলাইন্সকে বাৎসরিক প্রায় ১০৬৫০০ ডলার দিতে হয়। এক্ষেত্রে ঘন্টাপ্রতি ফ্লাইটের জন্য যাত্রীপিছু প্রায় ০’২৫ ডলার খরচ হয়।
তো, এই এতসব খরচের জন্য বিমান ভাড়াটা একটু বেশীই। তবে উন্নতমানের ডিজাইন, এফিশিয়েন্ট ইঞ্জিন, এবং বিমান তৈরীর কাঁচামালের উন্নতির কারণে বিমান ভাড়া আগের তুলনায় এখন অনেক কম। তবুও, যেহেতু টাইম ইজ মানি, মানি ইজ টাইম, তাই বিমানে চড়ার জন্য কিছুটা বেশী খরচ আপনাকে করতেই হবে।