নাসা মহাকাশে এত টাকা খরচ করেন শুধুমাত্র কিছু তথ্য নেয়ার জন্য তো সেক্ষেত্রে নাসার লাভ কিভাবে হয়?
আপনি যাকে “শুধুমাত্র কিছু তথ্য” ভাবছেন এর মূল্য টাকার লাভ-লোকসান দিয়ে হিসেব করতে পারবেন না। এই তথ্য মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য উন্মচিত করছে এবং পদার্থবিজ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করছে। এসব তথ্য জানার ফলেই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা এবং আপনি বাড়িতে বসেই আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারছেন। ভবিষ্যতে পৃথিবীর বাইরে বসতি গড়ার জন্যে নাসা আরও বেশি গবেষণা করতে চায়, কিন্তু বাজেট স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব নয় আপাতত।
সবচেয়ে বড়ো কথা নাসা নিজের লাভের জন্য টাকা খরচ করছে না, খরচ করছে মানব সভ্যতার জন্য। এর সুফল কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পাবেনা, পাবে এবং পাচ্ছে পুরো বিশ্ব। পৃথিবীতে যত ধরণের বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয় সবই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতভাবে প্রভাব ফেলছে এর হিসেব আমরা কয়জন রাখি বা রাখতে চাই? তাই হয়তো অনেক সময় মনে হয় “এরা অযথা টাকা নষ্ট করছে”!
ব্যাপার হচ্ছে, একটা জিনিস উদ্ভাবন বা আবিস্কারের আগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ এর উপকারিতা বুঝতে পারেনা। বিদ্যুৎ উদ্ভাবনের আগে মানুষ কখনও ভেবেছে এর দ্বারা কী সম্ভব? যারা এসব নিয়ে গবেষণা করতো তাঁদের মানুষ উপহাস করতো, কিন্তু এখন ওই গবেষণার সুফল ভোগ কারা করছে? কিন্তু এরপরেও অধিকাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী জানেনা “বিদ্যুৎ” জিনিসটা কী এবং এটা কিভাবে কাজ করে! এটা এখন তাঁদের কাছে ভাত-মাছের মতো স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। বিজ্ঞানের অবদানকে যুগে যুগে সাধারণ অজ্ঞ জনতা অস্বীকার করে আসছে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে বলার পর গ্যালিলিওকে তো বিধর্মী নাস্তিক বলে আখ্যা দেয়া হয়েছিল এবং এজন্য তাঁর বই করা হয়েছিল নিষিদ্ধ এবং ছিলেন গৃহবন্দী!
বর্তমানে আমরা পারমাণবিক জ্বালানী বলতে বুঝি ফিশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি। এটা পারমাণবিক বোমা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বা জাহাজ-সাবমেরিন চালনা থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এই পদ্ধতির সমস্যা হচ্ছে এর ফলে উৎপাদিত বর্জ্য খুবই ভয়ানক। এরা হাজার লক্ষ বছরেও নষ্ট হয়না এবং এর সংস্পর্শে মৃত্যু অনিবার্য। এছাড়া এই প্রযুক্তির কোন শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে দুর্ঘটনা হলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। চেরনোবিল এর জ্বলন্ত উদাহরণ! এই কথাগুলো বললাম, কারণ এখন গবেষণা হচ্ছে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তি নিয়ে। আমাদের মহাকাশের নক্ষত্ররা এভাবে শক্তি উৎপাদন করে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে পরিণত করে। এই পদ্ধতির উন্নয়ন করা গেলে শক্তির কোন অভাব থাকবে না পৃথিবীতে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে লাগবে না কোন কয়লা, তেল বা গ্যাস। থাকবে না কোন কার্বন নিঃসরণ! অর্থাৎ পরিবেশের ক্ষতি ছাড়া নিরাপদ শক্তির উৎস! এখন এটা জানার জন্যেও তো মহাকাশ গবেষণা করতে হয়েছে, তাইনা?
মহাকাশ গবেষণা বলতে অনেকে শুধু “অন্য গ্রহে গিয়ে বসবাস/জীবনের সন্ধান” মনে করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর মূল লক্ষ্য সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করে নিজেদের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা। কেউ যদি কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিরোধিতা করেন (সেটা যে বিষয়েই হোক), তাহলে ধরে নিতে হবে বিজ্ঞান ব্যাপারটা তাঁর কাছে শুধুমাত্র একটা শব্দ, এর বেশি কিছু না। বিজ্ঞানের মধ্যে বসবাস করে একে অস্বীকার করার ব্যাপারটা দুঃখজনক!