আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে আমরা এতোটা ব্যস্ত হয়ে যাই যে জীবনের ছোট ছোট আনন্দ উপলব্ধি করা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। মাঝে মাঝে প্রয়োজন পরে নিজের পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানোর।
আমাদের দেশে ঘুরার জন্য রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা কিন্তু অল্প সময় এবং অন্যান্য কারণে সবার পক্ষে ঢাকার বাইরে ঘুরতে যাওয়া সম্ভব হয়না।
রাজধানী ঢাকার চারপাশে গত কয়েক বছরে বেশকিছু নতুন বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এছাড়া ঢাকাবাসীর বিনোদনের চাহিদা মেটাতে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা এসব বিনোদনকেন্দ্রে ছুটির দিন ছাড়াও সাধারণ দিনগুলোতে ভ্রমণপিপাসুদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ছে।
সাগুফতা:
‘নিরিবিলি, গাছগাছালি আর একটু বসার জায়গা আছে, তাতেই কত মানুষ বেড়াতে আসছে। ঢাকায় পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাওয়া যায় এমন জায়গা তো খুব বেশি নেই। কালশী থেকে মিরপুর ডিওএইচএস পর্যন্ত সংস্কার হওয়া নতুন রাস্তার পাশে কিছুটা ফাঁকা জায়গা এবং ঝিল থাকায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসছেন। মূলত নতুন রাস্তায় পল্লবী ডি ব্লকের এক নম্বর সড়কের সামনে অবস্থিত মিরপুর আর্মি ক্যাম্প ক্যানটিন থেকে মিরপুর ডিওএইচএসের প্রবেশমুখ পর্যন্তই লোকজনের আনাগোনা বেশি। এ জায়গাটি অনেকের কাছে ‘সাগুফতা’ নামেও পরিচিত। সবুজের সমারোহ, ফাঁকা প্রান্তর, কাশফুলের টানে গরমে অতিষ্ঠ লোকজন চলে আসছেন সাগুফতায়।
কালশী সড়ক ধরে মিরপুর ডিওএইচএসের দিকে কিছুটা এগিয়ে এলে ফাঁকা জায়গায় বসেছে নাগরদোলা। ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ তোলা নাগরদোলায় চড়তেও সারি দিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পাশেই ঘোড়ার পিঠে করে দুই চক্কর ঘোরারও ব্যবস্থা আছে। বেলুন, খেলনার দোকান মিলিয়ে পুরো জায়গায় এসেছে গ্রামীণ মেলার আমেজ।
ঘোরাঘুরি শেষে দেশি-বিদেশি খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ আছে সাগুফতা এলাকায়। ডিওএইচএসের প্রবেশমুখে গড়ে উঠেছে একাধিক দোকান। পাশেই আছে কফির দোকান। প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত শরীর শীতল করতে দুই চুমুক দিতে পারেন কোল্ড কফি কিংবা মিল্কশেক।মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে নেমে কিংবা কালশী নতুন রাস্তার মোড়ে নেমে রিকশায় যেতে পারবেন সাগুফতায়।
উত্তরার দিয়াবাড়ী:
যানজট, ভাঙা রাস্তা আর জলাবদ্ধতায় বিরক্ত রাজধানীবাসীর অনেকেই এখন আসছেন উত্তরার দিয়াবাড়ীতে। শরতের বার্তা নিয়ে আসা কাশফুলের ছোঁয়ায় প্রশান্ত হবে প্রাণ। লেকের শীতল বাতাস ও সবুজের সমারোহে মুক্তি মিলবে শহুরে কোলাহল থেকে। সবুজ প্রান্তর। লেক পাড়। ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাস। চারপাশে কাশবন। রাজধানীর ভেতরে এ যেন এক ভিন্ন জগৎ। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরতে আসছেন নানাবয়সী লোকজন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারিত প্রকল্পের অংশ এই দিয়াবাড়ী। বটতলা থেকে কিছুটা সামনে নির্মাণকাজ চলছে ৩ নম্বর সেতুর। সেতুর দুপাশে লেকের পাড়ে গড়ে উঠেছে বোট হাউস। বাঁশ ও কাঠের কাঠামো দিয়ে বানানো হয়েছে বসার জায়গা। সারি দিয়ে বাঁধা প্যাডেল বোট (পায়েচালিত নৌকা)। ঘণ্টা ভিত্তিতে ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন।
তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক, মীরপুর
নতুন নতুন চমকপ্রদ রাইডস ও মজার সব খেলনা উপভোগের জন্য আপনার আনন্দকে আরও প্রানবন্ত করতে পার্ক সাজানো হয়েছে নতুন রূপে । তাই সপরিবারে বন্ধুদের সাথে ঘুরে আসুন তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক মিরপুর-১, ঢাকা।
বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক:
বইছে মৃদুমন্দ হাওয়া। শানবাঁধানো নদীর ঘাটে নৌকা বাঁধা। বৈকালিক হাঁটায় বেরিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ নৌকায় করে ঘুরছেন। বেঞ্চে বসে গল্পে মশগুল অনেকে। জায়গাটা গাছগাছালিতে ঢাকা। গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে পাকা রাস্তা। এটি একটি পার্ক, নাম বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক।
শহরের কোলাহল ছেড়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি। সবুজ বৃক্ষরাজি আর বুড়িগঙ্গা নদী মিলে পার্কটিকে করে তুলেছে নয়নাভিরাম।
লালবাগ কেল্লা :
লালবাগের কেল্লা বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রাচীন দুর্গ। মোঘল আমলে স্থাপিত এই দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত, আর সে কারণেই এর নাম হয়েছে লালবাগের কেল্লা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল।পুরান ঢাকার ভিড় ঠেলে কেল্লার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে পরী বিবির মাজার। এখানে আছে দরবার হল, নবাবের হাম্মামখানা (গোসলের জায়গা)। আছে শাহি মসজিদ। রয়েছে একটি জাদুঘরও। খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের টিকিট লাগবে না ।
আহসান মঞ্জিল :
পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ফুরফুর বাতাস গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছে আহসান মঞ্জিল। খোলা থাকবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশমূল্য জনপ্রতি পাঁচ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে দুই টাকা আর প্রতিবন্ধীদের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত।
হাতিরঝিল
ইট পাথরের এই ব্যস্ত শহরে ক্লান্তিকর নাগরিক জীবনের যখন ত্রাহি অবস্থা ঠিক এমনি সময় রাজধানীর হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে মনোরম এক বিনোদন কেন্দ্র। দিনে কিংবা রাতে যে কেউই ঘুরে আসতে পারেন হাতিরঝিলে।
ফ্যান্টাসি কিংডম :
বর্তমান সময়ের ঢাকাবাসীদের কাছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম। এই থিম পার্কে ঈদের দিন থাকছে কনসার্ট, নাচ প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন। তা ছাড়া বাম্পার বোট, বাম্পার কার, ইজিডিজি, জুজু ট্রেন, রোলার কোস্টার, ম্যাজিক কার্পেট, প্যাডল বোট। আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ড তো থাকছেই।
নন্দন পার্ক :
সাভারের নবীনগরের নন্দন পার্কে নানা রকম রাইড আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি আছে খুদে চিড়িয়াখানাও। ঈদ উপলক্ষে কনসার্টের ব্যবস্থা থাকছে এখানে। নন্দন পার্ক খোলা থাকবে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে নয়টা। সব রাইডসহ প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৪৯০ টাকা। তবে ৯০ সেন্টিমিটার বা তার কম উচ্চতার কারও টিকিট লাগবে না।Z
প্রতিদিন খোলা থাকে বেলা ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। যেকোনো সরকারি ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে খোলা থাকে।
ফোন: ৯৮৯০২৮৩, ০১৮১৯২২৩৫২৯
যমুনা ফিউচার পার্ক :
যমুনা ফিউচার পার্ক ঢাকা শহরের অভিজাত জায়গা কুড়িল, বারিধারা, প্রগতি সরণি ও গুলশান এর মত জায়গার কাছাকাছি। এটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর খুব নিকটে অবস্থিত। যমুনা ফিউচার পার্কে থাকছে নানারকম মজার রাইড, সিনেপ্লেক্স, ঈদ কনসার্ট ইত্যাদির আয়োজন।
শিশুপার্ক :
ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্ক এই ঈদে শিশুদের জন্য রাখছে টানা চার দিনব্যাপী ঈদ আয়োজন। সাধারণত বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকলেও ঈদের দিন শিশুপার্ক খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। মেরি-গো-রাউন্ড, চাকা পায়ে চলা, টয় ট্রেন, উড়ন্তবিমান, উড়ন্ত নভোযানসহ রয়েছে বেশ কিছু রাইড। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি আট টাকা। আর প্রতিটি রাইড উপভোগ করা যাবে ছয় টাকায়। সাপ্তাহিক বন্ধ: রোববার। বুধবার শুধু দুস্থ ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য খোলা। দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল চারটা (অক্টোবর-মার্চ); দুপুর দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)। বুধবার ছাড়া সোম থেকে শনিবার খোলা দুপুর একটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা (অক্টোবর-মার্চ); বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)। ফোন: ৮৬২৩৩০৪
শিশুমেলা :
ঢাকার শ্যামলী ওভারব্রিজের পাশে অবস্থিত এই শিশুমেলা খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা।
ঢাকা চিড়িয়াখানা, মিরপুর :
শিশুদের প্রধান আকর্ষণের একটি ঢাকা চিড়িয়াখানা । বাঘ-সিংহের গর্জন, মায়াবী চিত্রা হরিণ, পেঁচিয়ে পড়ে থাকা সাপের আলসেমি, বানরের বাঁদরামি, রোদ পোহানো কুমির, ময়ূরের পেখম ছড়ানোর ফ্যাশন শোসহ আরও কত–কী দেখার আছে। শুধু ঘুরে ঘুরে জীবজন্তু দেখাতেই নয়, চাইলে চড়ে বসতে পারে কোনো কোনোটার ওপর। খোলা থাকবে সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য টিকিট লাগবে না। আর প্রাণী জাদুঘরের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি দুই টাকা।
বলধা গার্ডেন:
ঢাকার ওয়ারীতে বিখ্যাত এই গার্ডেনের মালিক ছিলেন জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী। উনিশ শতকের শেষের দিকে এটি ছিল বলধার সেই জমিদারের বাগানবাড়ি। যা তখন ঢাকার উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। নিয়মিত সেখানে বসতো গান বাজনার আসর। ধারণা করা হয় বলধা নাম থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ হয়েছে।
প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা (মার্চ-নভেম্বর), সকাল নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি)। প্রবেশ মূল্য: পাঁচ টাকা। অনূর্ধ্ব ১০ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে প্রবেশ মূল্য দুই টাকা। আর শিক্ষাসফরে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য তিন টাকা।
অনেকে সময় কাটানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে এখানে আসে। আবার বিভিন্ন উদ্ভিদের উপর এসাইনমেন্ট করার জন্য কলেজের অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসে । তবে অনেক প্রকৃতি প্রেমিক আসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এবং ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন গাছ সম্বন্ধে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
এই গার্ডেনের আরেকটি বিশেষ দিক হল বিশ্ববিখ্যাত নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত কবিতা ক্যামেলিয়া লিখেছেন এই গার্ডেনে বসে।
বলধা গার্ডেনের আগের জৌলুস আর নেই। অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। বাগান সংরক্ষণের জন্য যতটুকু যত্নের প্রয়োজন তাও ঠিকমত নেওয়া হয় না। তারপরও বর্তমান ঢাকায় খানিকটা স্বস্তি, খানিকটা আনন্দের জন্য এখনও বলধা গার্ডেনই ভরসা।