কি কারনে বাচ্চা নষ্ট হয়?

গর্ভপাতের কারণ ও লক্ষণ

Best Asked on May 30, 2021 in Health.
Add Comment
  • 1 Answer(s)

    গর্ভপাতের কারণ ও লক্ষণ যদি একজন নারীর জানা থাকে তাহলে এটি অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। জানেন তো prevention is better than cure প্রবাদটি এমনিতে এতো জনপ্রিয় হয় নি! চলুন জেনে নিই গর্ভপাতের কারণ ও লক্ষণ এবং এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত…

    গর্ভপাতের কারণ

    বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটা দেখা যায় যে প্রথম তিন মাসে যে বাচ্চাগুলো নষ্ট হয় বা গর্ভপাত হয়, সেগুলোর শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে ভ্রূণটিতে সমস্যা থাকে। আর হয়তো ২০ ভাগ ক্ষেত্রে মায়ের শরীরে কোনো সমস্যা থাকে। আবার যদি ১২ সপ্তাহ থেকে ২৮ সপ্তাহ অর্থাৎ দ্বিতীয় তিন মাসে যদি কোনো বাচ্চা নষ্ট হয়, তাহলে শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চার সমস্যা থাকতে পারে, অথবা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে মায়ের কোনো কারণে হয়তো বাচ্চাটি নষ্ট হচ্ছে। আবার শেষের দিকে ২৮ সপ্তাহের পরে যদি পেটে বাচ্চা মারা যায়, কিংবা অকালে গর্ভপাত হয়, তাহলে  বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যাটা মায়ের শরীরে থাকে। বিভিন্ন কারণে গর্ভপাত হতে পারে যেমন-

    • সবথেকে যে কারণে বেশি গর্ভপাত হয়ে থাকে তা হল শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর ক্রোমোজমাল বা গঠনগত কোন ত্রুটি।
    • সার্ভিকাল ইনকম্পিটেন্স বা জরায়ুর মুখ যদি ভ্রূণকে জরায়ুর ভেতর ঠিকভাবে ধরে না রাখতে পারে।
    • গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায় তবে ভ্রূণেরও রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে গর্ভপাত হতে পারে।
    • গর্ভবতী মায়ের যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস থেকে থাকে এবং তা যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে তবে অনেক সময় গর্ভপাত হতে পারে।
    • যদি মা গুরুতরভাবে ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হাম বা কলেরা রোগে আক্রান্ত হন তবে এর জীবাণুর কারণে গর্ভপাত হতে পারে।
    • মায়ের যদি থাইরয়েড-এর সমস্যা থাকে তাহলে ভ্রূণের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে গর্ভপাত হতে পারে।

     

    • গর্ভাবস্থায় মা যদি প্রচন্ড মানসিক দুশ্চিন্তা বা কষ্টে থাকেন তখন ভ্রূণের হৃদস্পন্দনের ভারসাম্যহীনতার কারণে গর্ভপাত হতে পারে।
    • গর্ভাবস্থায় পড়ে গিয়ে পেটে প্রচন্ড আঘাত পেলে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণের কারণে গর্ভপাত হতে পারে।

    গর্ভপাতের ঝুঁকিতে রয়েছেন কারা?

    • যাদের এর আগে দুই বা ততোধিক বার গর্ভপাত হয়েছে।
    • মায়ের বয়স যদি ৩৫ বা তার বেশী হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে গর্ভপাতের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।
    • মা যদি সিগারেট, অ্যালকোহল বা অন্য কোনও নেশায় আসক্ত থাকেন, তাহলেও ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত।
    • মা যদি গর্ভাবস্থায় কোন ক্ষতিকর ক্যামিকেল-এর সংস্পর্শে আসে তবে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটতে পারে।
    • মায়ের শরীরে যদি অতিরিক্ত চর্বি থাকে এবং মায়ের বডি ম্যাস ইন্ডেক্স যদি ৩০ বা তার বেশী হয় তাহলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশী থাকে।
    • এছাড়াও পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর কারণেও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

    গর্ভপাতের লক্ষণ

    গর্ভধারণ করার ৭-১০ দিনের মাথায় ইমপ্লান্টেসন-এর কারণে কিছু রক্তপাত হয়। এটা স্বাভাবিক। এই রক্তের পরিমাণ অনেক কম থাকে, এমনকি নরমাল মাসিকে যে রক্ত যায়, তার চেয়েও কম। তবে অতিরিক্ত রক্ত গেলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন। গর্ভধারণের পর অস্বাভাবিক রক্তস্রাব গর্ভপাতের প্রধান লক্ষণ। গর্ভপাতের সময় রক্তপাতের পরিমাণ সাধারণ পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের চেয়ে বেশি হয়। তলপেটে ব্যথাও হতে পারে। অনেক সময় রক্তের সাথে মাংসল চাকার মতো বের হতে পারে। শুরুতে রক্তপাত অল্প থাকে, কিন্তু ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং তার পরেই রক্তপিন্ড বের হতে থাকে।

    থাইরয়েড এর লক্ষণ - shajgoj.com

    গর্ভপাতের পর চিকিৎসা ব্যবস্থা কি?

    গর্ভপাত হলে প্রথম করণীয় হলো রক্তক্ষরণ বন্ধ করা এবং গর্ভপাত পরবর্তী ইনফেকশন প্রতিরোধ করা। যদি গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভপাত হয় তবে গর্ভের সমস্ত ফিটাল টিস্যু এমনিতেই বের হয়ে যায়। কিন্তু ভ্রূণ ও প্লাসেন্টার সকল অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হয়ে না গেলে অপারেশন করে বের করে ফেলতে হবে। তবে অপারেশনের পরও রক্তস্রাব পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কোনো কারণে রক্তস্রাবের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিংবা জ্বর এলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

    গর্ভপাত প্রতিরোধের উপায়সমূহ কি কি?

    গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ সময় যেকোনো মাকে একটু সাবধানে থাকতে হবে। ভারী কাজ করা ও সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। পূর্বে কোনো রোগের ইতিহাস থাকলে ডাক্তারকে জানাতে হবে। পুর্বে একাধিকবার গর্ভপাত হয়ে থাকলে পুনরায় গর্ভধারণের আগে ফিজিক্যাল চেকআপ করিয়ে নিন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পূর্বের গর্ভপাতের কারণ জানতে চেষ্টা করুন। পরবর্তীতে যাতে একই কারণের পূনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।  প্রয়োজন ছাড়া দীর্ঘ ভ্রমণ করা যাবে না। প্রচুর পানি পান করতে হবে।

    গর্ভপাত প্রতিরোধে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার দাওয়ার কেমন হবে?

    ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিড, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। এটি বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয় এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় যেমন চা, কফি বা চকলেট এবং মানসিক চাপের সাথে গর্ভপাতের সর্ম্পক রয়েছে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।  গর্ভাবস্থায় বেশি সতর্ক থাকতে হয় ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে। কারণ অনেক ওষুধ এমন আছে যার ফলে গর্ভের সন্তানের সরাসরি ক্ষতি সাধিত হয়। শিশু বিকলাঙ্গ, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে। অনেক সময় ওষুধ সেবনের ফলে মৃত সন্তানের জন্মও হতে পারে। তাই ওষুধ সেবনের আগে সতর্ক থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না।

    Better Answered on May 30, 2021.
    Add Comment
  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.