আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির দুমড়ে যাওয়ার কারণ কী? কী বলছে গবেষণা?

আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির দুমড়ে যাওয়ার কারণ কী? কী বলছে গবেষণা?

Asked on November 20, 2023 in Science.
Add Comment
  • 1 Answer(s)

    আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি স্পাইরাল ডিস্ক-অর্থাৎ সর্পিলাকার চাকতির মতো। যেটা দেখতে অনেকটা মশার কয়েলের মতো। আবার মশার কয়েলের মতো ঠিক সমতলও নয়। আছে দোমড়ানো ভাব।

    বিশেষ করে এর গ্যালাক্সির বাইরের দিকে বাহুগুলো বেশখানিকটা বাঁকা। মশার কয়েল জলীয় বাষ্প ধরে ড্যাম হয়ে গেলে সেটা আর সমতল থাকে না, বাঁকাচুরা একটা ভাব দেখা দেয়। আমাদের আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সিরও তেমন বাঁকাচুরা অর্থাৎ দোমড়ানো ভাব আছে। মিল্কিওয়ে তো আর মশার কয়েল নয়, জলীয়বাষ্প ধরে ড্যাম হয়ে যাবে! তাহলে এর এই দোমড়ানো ভাবের কারণটা কী?
    বহুদিন ধরে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁছছিলেন বিজ্ঞানীরা, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছিল না সঠিক কারণ।

    অবশেষ সেই কারণ যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের একদল গবেষক ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ডার্ক ম্যাটারের কারণেই গ্যালাক্সি এভাবে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে।
    তাঁরা জানাচ্ছেন, আমাদের মিল্কিওয়ে দেখতে সর্পিল ও চ্যাপ্টা চাকতির মতো হলেও একে চারপাশ থেকে ঘিরে আছে ডার্ক ম্যাটারের এক বিশাল গোলক, যা দৃশ্যমান নয়, শুধু মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণেই এর অস্তিত্ব শনাক্ত করা যায়।

    জ্যোতির্পদার্থবিদরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার যেমন মিল্কিওয়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে, তেমনি অজানা ও রহস্যময় ডার্কম্যাটারের সম্পর্কেও আরো বিশদে জানতে সাহায্য করবে।

    ডার্কম্যাটারের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য নিয়েও বহুদিন গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই গবেষণার পর জানা যাবে, মহাকাশের গ্যালাক্সিগুলোর বিকাশে ডার্কম্যাটার কিভাবে প্রভাব ফেলে।
    ডার্ক ম্যাটার দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রহেলিকা হয়ে আছে। গোটা মহাবিশ্বের মোট যত বস্তু আছে, তার ৮৫ শতাংশই ডার্ক ম্যাটার। মাত্র ১৫ শতাংশ দৃশ্যমান বস্তু।

    অর্থাৎ মহাকাশে যত গ্যালাক্সি, গ্রহ, নক্ষত্র, ধুলাবালি দেখি, তা মহাবিশ্বের মোট পদার্থের মাত্র ১৫ শতাংশ।
    প্রতিটা গ্যালাক্সিতেই আছে ডার্কম্যাটারের অস্তিত্ব। এটা আসলে সৌভাগ্যের বিষয়। যদি ডার্ক ম্যাটার না থাকত, আমাদের গ্যালাক্সি তার নক্ষত্র-গ্রহ-উপগ্রহ-গ্রহাণু নিয়ে যে বেগে ঘোরে, সেটা ভয়ংকর বিপর্যয় ডেকে আনত। কারণ ঘোরার বেগ এত বেশি যে এর প্রভাবে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো ছিটকে মহাবিশ্বে হারিয়ে যেত।

    ডার্ক ম্যাটারের মহাকর্ষীয় টান এদেরকে একত্রে ধরে রাখে। অর্থাৎ গ্যালাক্সিতে গ্রহ-নক্ষত্রদের আটকে রাখার জন্য ডার্ক ম্যাটার আঠার মতো কাজ করে।

    ২০২২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকদলটি একটা গবেষণা করেন। তাঁরা কম্পিউটার সিমুলেশন করে জানার চেষ্টা করেন, ডার্ক ম্যাটার ছাড়া মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি নিজেই যদি গোলক হতো, তাহলে কেমন হতো। তাদের সেই সিমুলেশনে দেখা যায়, মিল্কিওয়ের গোলক- যেটাকে ‘নাক্ষত্রিক গোলক’ বলছেন বিজ্ঞানীরা, সেটা আর ডার্ক ম্যাটারের গোলকের আকৃতি একই রকম, যদিও ডার্ক ম্যাটারের গোলক অনেক অনেক বড়। তারা এটাও দেখেছেন, খুব সহজেই নাক্ষত্রিক গোলকটাকে ডার্ক ম্যাটার গোলকের ভেতর বসিয়ে দেওয়া যায়।

    গবেষক দলের প্রধান জিওন জেসি হান বলেন, ‘যদি আমাদের গ্যালাক্সি নিজে নিজে বিকশিত হতো তাহলে এমন চাকতির মতো না হয়ে গোলকের মতোই হতো। এটা চাকতির মতো হয়েছে, তার কারণ বহু আগে আরেকটা গ্যালাক্সির সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে এর। তারপর দুটিতে মিলে একটা সর্পিল চাকতি আকৃতির গ্যালাক্সি তৈরি করেছে।’

    তিনি মনে করেন, গ্যালাক্সির যে সর্পিল গঠন, সেগুলো অনেকটা দোমড়ানো-মোচড়ানো, এসবের ব্যাখ্যা একমাত্র ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি সাপেক্ষেই দেওয়া সম্ভব। গ্যালাক্সিদের বিবর্তন ব্যাখ্যায় তাঁদের এই গবেষণা মাইলফলক বয়ে আনবে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে, এমনটাই মনে করছেন হান।

    Answered on November 20, 2023.
    Add Comment
  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.