অনন্ত জলিলের পোশাক নিয়ে মন্তব্যের সাথে আপনি কি একমত?
অনন্ত জলিলের পোশাক নিয়ে মন্তব্য
Give me some sunshine
Give me some attention
Give me another chance
I wanna grow up once again..
কি ভাবছেন Rain না লিখে attention কেন লিখছি?এটা তো ভুল..নাহ ঠিকি আছে, এটা আসলে অনান্তা জলিল সাহেবের দেয়া বক্তব্যের পেছনের গোপন রহস্য..
আজব আজব কাজ করে / বক্তব্যে প্রচার করে দুই দিন পর পর দেশের পাব্লিকের এটেনশন পাওয়া সবচেয়ে সহজ একটা উপায়। আর এই মাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছেন আমাদের দেশের অংসখ্য সেলিব্রিটি, এমপি, মন্ত্রীরা.. জলিল সাহেবের কথাই ধরুন, কখনো হয়ে যান নায়ক, কখনো আবার হুজুর..সব কিছুর মূলেই হচ্ছে চর্চায় থাকা…
°°°°°°°°
এই যে জলিল সাহেব ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাকে দায়ী করলেন এটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটা বক্তব্য।
কেন অযৌক্তিক আসেন সেই কথায় আসি..
আমার কাছে মনে হয় বর্তমান সময়ের বাংলাদেশি নারীদের মত “শালীন” পোশাক গত ১০০ বছরেও মেয়েরা পড়ে নাই..হিজাবী, নিকাবি, বোরখা পরিহিতা মেয়ে, মহিলাদের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে..
আমার কথার সাথে আপনি একমত না হলে বাহিরে যান দেখেন ১০০ টা মেয়ের মধ্যে মিনিমাম ৩০ টা মেয়েই বোরখা পড়ছে (সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে), বাকি ৪০ টা মেয়েই কামিজ পাজামা পড়ছে..১০ ১৫ জন হয়তো জিন্স টপস পড়ছে.. আমাদের দেশের মেয়েদের পোষাক এতই অশালীন হয়ে যায় নাই যে তারা ইউরোপের মেয়েদের মতো হাফ পেন্ট পড়ে বাহির হয়..
আশির দশকেও মেয়েদের প্রধান পোশাক ছিল শাড়ী।
ধনী মহিলাদের শাড়ির চাইতে গরীব মহিলাদের শাড়ির দৈর্ঘ কয়েক হাত কম হতো..পা ঢাকলে মাথা ঢাকতো না, মাথা ঢাকলে পা ডাকতো না অবস্থা..
শাড়ির নিচে ব্লাউজ মধ্যবিত্ত কিংবা ধনী পরিবারের মেয়ে বউরা পড়তো..যা গরিবের জন্য ছিলো অনেকটাই স্বপ্নের মতো..যার কারনে অধিকাংশ গ্রামের বা শহরের গরীব মহিলা ব্লাউজ ছাড়াই শাড়ি পড়তো।
অথছ বর্তমান সময়ের দিকে দেখুন.. ৪০% থেকে ৫০% + মহিলা ফুল টাইম কিংবা পার্ট টাইম “পর্দা করেন” মানে হচ্ছে তারা হিজাব, নিকাব, বোরখা পড়েন দিনের কোন এক সময়।
কয়েক বছর আগের কথাই ধরুন, কয়টা মেয়েকে আপনি স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হিজাব, নিকাব, বোরখা পড়ে স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে যেতে দেখছেন? কিন্তু এখন দেখুন, অধিকাংশ মেয়েই কিন্তু হিজাব, নিকাব, বোরখা পরছে..
নব্বই এর দশকে গার্মেন্টেসে যেই মেয়ে গুলো কাজ করতো তারা ছোট ছোট সাইজের ওড়না এবং স্বল্প দৈর্ঘের কামিজ পড়তো।না, সেক্সি সাজার জন্যে না। সেলোয়ার কামিজের দাম কম রাখার কৌশল হিসেবে গরীব মেয়েদের সস্তা কামিজ সেলোয়ারে কম দৈর্ঘের কাপড় ব্যাবহার করা হতো।
২০২০ সালে এসে দেখবেন গার্মেন্টসের অধিকাংশ মহিলা এখন বোরখা, হিজাব পড়েন। কারন তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, সমাজে ধর্মের প্রভাব, নারীদের নিরাপত্তাহীনতা এগুলোর সমন্বিত প্রভাবে এখন অনেক মহিলা ইসলামী পোশাক পড়েন।
°°°°°°°°°
এখন আপনিই বলেন কি ভাবে ধর্ষণের জন্য আমাদের দেশের মেয়েদের পোশাক দায়ী..পোশাক যদি ধর্ষণের কারন হতো তাইলে তো মেয়েদের শালীন পোষাক পড়া বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ধর্ষণের সংখ্যা কমার কথা.. উলটা তো নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্ট ঘটনা সবার সামনে আসছে।
আমি ফ্রান্সে আসার পর ফ্রেন্ডদের সাথে একবার veules les roses এ ঘুরতে যাই..অধিকাংশ মেয়েই দেখলাম খালি গায়ে বিচে ঘুরছে, সান বাথ নিচ্ছে.. তো একজনকে জিজ্ঞেস করি যে এভাবে যে ঘুরছে বা শুয়ে আছে কেউ বাজে ভাবে টিজিং বা সুযোগ নেয়ার ট্রাই করে না.. তখন সে আমার দিকে অবাক হয়ে এমন ভাবে তাকায় মনে হয় না জানি কি বলছি..এমন করার কোন সুযোগ নেই, যদি কেউ কিছু করতে চায় তবে অবশ্যই মেয়েটার অনুমতি থাকতে হবে না হলে মেয়েটা ছেলেটার বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের লিগাল একশনে যেতে পারবে..
আমাদের দেশেই দেখুন, হাজার হাজার ছেলে শার্টের বোতাম খুলে বুক ফুলিয়ে, হাফপ্যান্ট পরে পায়ের রান দেখিয়ে, পাছা বের করে আন্ডারওয়্যার নিচে নামিয়ে রাস্তায় হাটার পরেও শুনি নাই কোনো মেয়ে ছেলেদের ধরে টিজ করতে বা ধর্ষন করতে..তাইলে পোষাকের জন্য মেয়েদের কেন ধর্ষন করা হবে..আবার পরে সেই ধর্ষণের জন্য মেয়েদের দোষ দেয়া হবে..
আমি জলিল সাহেবের অনেক কাজের প্রশংসা করি.. কিন্তু এই যে উনি এই বক্তব্যটা দিলেন এর মাধ্যমে উনি নিজেই নিজেকে ছোট করলেন.. উনি নিজেই তো অশ্লীলতার প্রচার করেন..উনার মুভির গান গুলা দেখেন.. অসংখ্যা মেয়ে ডান্সার ব্যাবহার করছেন..যাদের পেট, নাভি, ক্লিভস দেখা যায়..মানে বিচার মানি তালগাছ আমার..
সমাজে ধর্ষন বেড়েছে সমাজে বিচার হীনতার কারনে, রাষ্ট্রের সর্বচ্চো পর্যায়ে জবাবদিহীতা না থাকার কারনে, শাসন ব্যাবস্থা পচে যাবার কারনে। এগুলো যতদিন না ঠিক হবে ততদিনে সমাজের ১০০% মহিলাকে বোরখা পড়ালেও ধর্ষন এবং সেক্সুয়াল এসাল্ট চলতেই থাকবে।