আজকাল সব মোবাইল হ্যান্ডসেটে নন-রিমোভেবল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় কেন?
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে অ্যাপেল আইফোন শুরু থেকেই তাদের ফোনে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যবহার করে আসছে। তাতে কিন্তু কারো কোন মাথার ব্যাথা ছিল না। কিন্তু যেই স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি এস৬ ফোনে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যবহার করে দিল তাতেই হাজারটা মন্তব্যের সূচনা ঘটতে আরম্ভ করে দিল। যাই হোক, অনেক ব্যবহারকারীর মনে প্রশ্ন থাকে যে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ওয়ালা ফোন বেশি ভালো না রিমুভেবল ব্যাটারি ওয়ালা ফোন বেশি ভালো? আবার আমরা প্রায় সবাই মানুষের শোনা কথা নিয়ে বেশি নাচতে পছন্দ করি।
আপনাকে হয়তো কোন বন্ধু এসে বল্ল যে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ফোন একদম বেকার, ব্যাটারি খোলা যাবে না, একদমই কেনা উচিৎ নয়। আর সেটা শুনে আপনিও তালে তাল মেলালেন। আর আপনিও আরো ১০ জন বন্ধুকে গিয়ে একই গান শুনালেন।
নন-রিমুভেবল ব্যাটারির প্রয়োজনীয়তা
আগের দিনের ফোনে কিন্তু এমনটা হতো না কিন্তু আজকের দিনে এটি একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে যে আপনার ফোনের ব্যাটারি নন-রিমুভেবল হবে [স্মার্টফোন ব্যাটারির বিশেষ যত্ন নেবার উপায় সমূহ]। এর পেছনে আসলে আলাদা আলদা দুই তিন কারন রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
- নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যাবহারের সবচেয়ে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ কারনটি হলো আপনার ফোনের ডিজাইন অনেক ভালো বানানো সম্ভব হয়। আপনার ফোনে যদি একটি নন ইউজার রিমুভেবল ব্যাটারি থাকে তবে আপনার ফোনের ডিজাইন অনেক স্লিম হওয়া সম্ভব হবে, আপনার ফোন ওজনে অনেক হালকা হওয়া সম্ভব হবে। আপনার ফোনটি মেটাল দিয়ে বানানো সম্ভব হবে এবং ফোনের ডিজাইন প্রিমিয়াম হওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু আপনার ফোনে যদি ইউজার রিমুভেবল ব্যাটারি থাকে তবে ফোনের ডিজাইন মোটা হতে পারে, ওজনে ভারি হতে পারে। ফোনের পেছনের অংশে হয়তো প্ল্যাস্টিক ব্যবহার করা থাকবে ফলে ফোনে প্রিমিয়াম লুক দেখতে পাওয়া যাবে না। তো ফোনের লুক পরিবর্তন করতে এবং একটি ভালো ফোন তৈরি করতে আমাদের প্রয়োজন পরে নন-রিমুভেবল ব্যাটারির।
- আগের দিনে, নোকিয়া ফোন গুলোর ক্ষেত্রে যখন ২-৩ বছরের মধ্যে ফোনের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যেতো তখন বাজার থেকে যেকোনো সস্তা ব্যাটারি কিনে নিয়ে এসে ব্যবহার করা হতো। সে সব ব্যাটারির কোয়ালিটি একদম বেকার হতো। আবার নোকিয়ার নামেই অনেক নকল ব্যাটারি কিনতে পাওয়া যেতো। কিন্তু ঐ সকল ব্যাটারি এনে ফোনে লাগানোর পরে কিছু দিন পর দেখা যেতো যে ব্যাটারি ফোনের ভেতর ফুলে গেছে। আবার কখনো কখনো ফোনের ব্যাটারিতে সর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লেগে গেছে এমনটাও শুনতে পাওয়া যেতো। কিন্তু দোষ কাকে দেওয়া হতো? আপনার ফোন কোম্পানিকে। বলা হতো আরে ভাই অমুক কোম্পানির ফোন ব্লাস্ট হয়ে গেছে [মোবাইল ফোন ব্যাবহারে কি আপনার কোন ক্ষতি হতে পারে? বিস্তারিত জানুন]। তো এই অবস্থায় এখন মোবাইল প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা ভাবে যে তারা তাদের ফোনে একটি সিল্ড ব্যাটারি লাগিয়ে দেয়। যাতে একজন সাধারন ইউজার তা না খুলতে পারে। এবং ব্যাটারি নষ্ট হলে কেবল মাত্র অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টারে সেটি রিপ্লেস করানো হয়। ফলে ব্যবহারকারী একটি সস্তা ব্যাটারি না লাগিয়ে বরং একটি ভালো মানের আসল ব্যাটারি লাগাতে পারে। এর ফলে আপনার সুরক্ষাও বজায় থাকবে এবং কোম্পানির সুনামও বজায় থাকবে।
- তৃতীয় কারন হলো ব্যাটারি পরিবর্তনের সময় দেখতে পাওয়া যায় আপনার ফোন কোম্পানি দ্বারা প্রস্তুতকৃত ব্যাটারির মূল্য একটু বেশি হয়ে থাকে। যেমন মনে করুন আপনার ফোনে রিমুভেবল ব্যাটারি লাগানো আছে। এবং আপনি পরিবর্তন করতে যাওয়ার সময় দেখলেন যে আপনার ফোন কোম্পানির ব্যাটারির দাম দুই হাজার টাকা এবং একই মানের অন্য কোম্পানির ব্যাটারির দাম ১৫০০ টাকা। তো কেন আপনি ৫০০ টাকা বেশি খরচ করবেন, যেখানে অন্য কোম্পানি কম টাকায় একই মান সরবরাহ করছে। তো এই অবস্থায় ফোন কোম্পানি বেশি মুনাফা অর্জন করা থেকে বাঁধা পায়। এজন্য কিছু কোম্পানি তাদের ফোনে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি লাগানোর সিদ্ধান্ত এই জন্য নেয় যে ব্যবহারকারী তাদের কাছেই ব্যাটারি পরিবর্তন করতে আসবে। এবং এতে তারা সামান্য বেশি মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
দেখুন, আপনি যদি সেই ব্যাক্তিটি হোন, যিনি নেক্সট আইফোন বা গ্যালাক্সি ফোনে রিমুভেবল ব্যাটারি আশা করছেন, তো দুঃখিত সেটা আর জীবনেও হয়তো সম্ভব হবে না। উপরের আলোচনা থেকে হয়তো পরিষ্কারই বুঝতে পারছেন রিমুভেবল ব্যাটারি স্মার্টফোন থেকে কাজের জন্যই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা হেডফোন জ্যাক সরিয়ে ফেলার মতো অযৌক্তিক ছিল না। মোটা সাইজ, সস্তা ডিজাইন, আর আরো বেটার যন্ত্রপাতি ফিট করার লক্ষে রিমুভেবল ব্যাটারি স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আর এটাই উত্তম সিদ্ধান্ত!