একটি দেশ প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা ছাপাতে পারে না কেন?
খুব ভালো প্রশ্ন!! আগে যখন ছোট ছিলাম তখন ভাবতাম সরকার কেন অতিরিক্ত নোট ছাপিয়ে গরিবদের দিয়ে দেয় না তাহলেই তো সব গরিবী শেষ হয়ে যাবে কিন্তু পরে জেনেছি সেটা আদতে করা সম্ভব নয়।
প্রথমে ধরুন সরকার ব্যাঙ্ক থেকে অতিরিক্ত নোট ছাপিয়ে বাজারে ছেড়ে দিলো বা সেটা গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দিলো। যেই মানুষের হাতে টাকা আসবে ওমনি তাদের মধ্যে নানা জিনিসপত্র কেনার ইচ্ছা হবে।সেই উপলক্ষে বাজারে নানা জিনিসপত্রের চাহিদা মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি ভাবে কিন্তু চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদনের হার আগের মতোই রয়েছে । অর্থাৎ টাটা মোটোর্স্ যদি আগে মাসে ১০০০টা মোটর সাইকেল বানাতো পরেও ওই একই সংখ্যক মোটর সাইকেল বানাবে। যেহুতু চাহিদা বেশি তাই বাজারে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে,মানে আগে মোটর সাইকেল ২৫০০০ টাকাই বিক্রি হতো এখন সেটার দাম বেড়ে ৮০০০০ বা তার বেশি হয়ে যাবে।একই সাথে বাজারে বিভিন্ন জিনিসপত্রের যোগানও কমে যাবে। এই রকম ভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে শেষে মুদ্রাস্ফীতির হার আরো বেড়ে গ্যালপিং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে।তখন কিন্তু দেশের সরকার শত চেষ্টা করলেও দেশের অর্থনীতির উন্নতি করতে পারবে না।
এখন প্রশ্ন হলো পূর্বে কোনো দেশে কি এইরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল?
হ্যাঁ!! প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হলে মিত্র শক্তি তাদের উপর অপমানজনক ভার্সাই চুক্তি চাপিয়ে দেয়।ক্ষতিপূরণ হিসাবে জার্মানির কাছ থেকে এক বিশাল পরিমান অর্থ চাওয়া হয় কিন্তু সদ্য বিশযুদ্ধ থেকে হেরে এসে তাদের কোষাগার প্রায় শুন্য হয়ে গিয়েছিলো।তাই তারা ক্ষতিপূরণ দেবার জন্যে অতিরিক্ত পরিমানে টাকা ছাপতে থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা চাপলে কি হয় সেটা আগেই বলেছি,ওই একই পদ্ধতিতে তাদের দেশেও দেখা দেয় হাইপার মুদ্রাস্ফীতি। হাইপার মুদ্রাস্ফীতি গ্যালপিং মুদ্রাস্ফীতির থেকেও ভয়ংকর। সেই সময় এক টুকরো পাউরুটি কিনতে হলে একটা ঠেলাগাড়িতে করে টাকা নিয়ে যেতে হতো।
জার্মানিতে টাকা ছাপিয়ে বিতরণের জন্যে পাঠানো হচ্ছে
গ্রাফ থেকে সেই সময়ের জার্মানির মুদ্রাস্ফীতির অবস্থা বোঝা যাচ্ছে।