‘কনডেম সেল’ কী? কনডেম সেল-এর সাথে কারাগারের অন্যান্য সেলের পার্থক্য কী?

কনডেম সেল

Asked on October 6, 2020 in Solution.
Add Comment
  • 1 Answer(s)

    মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামীদের জেলখানার যে নির্জন কক্ষে রাখা হয়, তাকে কনডেম সেল ( Condemned Cell) বলে। আদালতে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর আসামিকে কারাগারের কনডেম সেলে নেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগপর্যন্ত আসামিদের কনডেম সেলেই রাখা হয়।

    দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড দান করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগের নিকট কার্যক্রম পেশ করবেন। ( CrPC-ধারা ৩৭৪)।ডেথ রেফারেন্স মামলাটি নিশ্চিতকরণের জন্য উপস্থাপন করা হলে আদালতের দায়রা সিদ্ধান্তটি হাইকোর্ট দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হতে পারে।( CrPC- ধারা ৭৬) হাইকোর্ট বিভাগ উহা অনুমোদন দেয়ার পূর্বে একজন আসামী দীর্ঘ সময় এই কনডেম সেলে থাকতে হয়। ২০ বছর কনডেম সেলে থেকে খালাস পেয়েছে এমন নজিরও রয়েছে।

    বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। বাংলাদেশে ৬৮ কারাগারে মোট ৮৮৮ জন বন্দী কনডেম সেলে আছেন। সাধারণ বন্দী ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য থাকা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এক নয়। এখন অন্য বন্দীদের থাকার জায়গার সঙ্গেও কনডেম সেলের বেশ পার্থক্য আছে। একজন বন্দী থাকার কনডেম সেল সাধারণত ১০ ফুট বাই ৬ ফুট আয়তনের থাকে। আবার অনেক কারাগারে সেলের মাপ কিছুটা বড় থাকে। কনডেম সেলের মধ্যে বন্দীর থাকা-খাওয়া, গোসল ও টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে।একটি কনডেম সেলে সাধারণত একজন বা তিনজন বন্দী রাখা হয়।

    বাংলাদেশের জেল কোড বা কারাবিধিতে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে রাখার মতো কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকলেও তাঁদের আলাদা ধরনের কক্ষে রাখা হয়। এটিকে একধরনের রেওয়াজ বলা যেতে পারে। কনডেম সেলের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য ছোট আকারের জানালা থাকে। সাধারণত ধারণা করা হয়, কনডেম সেলে দুজন বন্দী থাকলে তাঁরা কারাগার থেকে গোপনে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। তবে তিনজন থাকলে পরিকল্পনা আর গোপন থাকে না। ওই ধারণা থেকেই দুজন বন্দীকে একটি কনডেম সেলে রাখা হয় না। আর এই সেলে থাকা বন্দীদের দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেলের বাইরে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। কারাবিধি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর একজন বন্দীকে কারাগারে সার্বক্ষণিক পাহারায় রাখা, দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হলেও আলাদা কক্ষে রাখার বিষয়টি আইনে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই।

    আগে কনডেম সেলের বন্দীদের নিজেদের সেলের বাইরে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। সেল থেকে বছরের পর বছর বের হননি, এমন উদাহরণও আছে। কিন্তু একটি ছোট ঘরের ভেতরে দীর্ঘ সময় থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই বর্তমানে কনডেম সেলের বন্দীদের দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বাইরে চলাফেরা করতে দেওয়া হয়। কনডেম সেলে থাকা বন্দীরা মাসে এক দিন দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। বিশেষ বিবেচনায় কখনো কখনো ১৫ দিনের মধ্যেও কনডেম সেলের আসামির সঙ্গে দর্শনার্থীদের দেখা করতে দেওয়া হয়। তারা কারাগার শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়ে।

    সাধারণ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা এক কক্ষে অনেকে থাকেন, কক্ষের বাইরে ঘোরাফেরার সময়ও বেশি পান। তাঁদের খাবারের জন্য ডাইনিংয়ে যাওয়া, গোসলের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। দর্শনার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ক্ষেত্রে সাধারণ বন্দীরা বেশি ছাড় পান।

    Answered on October 6, 2020.
    Add Comment
  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.