কাবা কি পৃথিবীর ভৌগোলিক কেন্দ্র?
পৃথিবির হজ্জ্ব, মুসলিম মিলন কেন্দ্র কাবাঘর। বৈজ্ঞানিক সৃষ্টি কেন্দ্র ‘Golden ratio’, পৃথিবির এই গোল্ডেন রেশিও কাবাশরীফ, মক্কা,সৌদিআরব।
ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে কাবা পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। কাবাকে কেন্দ্রে ধারণ করে পৃথিবী ঘূর্ণায়মান রয়েছে।
বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা জানি যে, বছরের একটি বিশেষ দিনে একটি বিশেষ সময়ে (মধ্যাহ্নে) সূর্য কাবা শরিফের ঠিক মাথার ওপরে অবস্থান করে। তখন কাবা শরিফ বা মক্কা শরিফে অবস্থিত কোনো অট্টালিকা বা কোনো স্থাপনারই ছায়া চোখে পড়ে না। পৃথিবীর অন্য কোনো স্থানে এরূপ ঘটে না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, পবিত্র কাবা ভূমণ্ডলের ঠিক মধ্যস্থলে অবস্থিত।
ভূপৃষ্ঠের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় কাবাকে পৃথিবীর কেন্দ্র বা হৃদয় বলা যায়। মানুষের হৃৎপিণ্ডকে যেমন হৃদয় বলা হয়, পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুকেও তেমনি সঙ্গতভাবেই পৃথিবীর হৃদয় বলে ভিহিত করা চলে। এটা হলো একধরনের বৈজ্ঞানিক বা বস্তুগত ধারণা, যে জন্য কাবাকে পৃথিবীর হৃৎপিণ্ড হিসেবে অভিহিত করা যায়।
মহান স্রষ্টা এক এবং তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বমতার অধিকারী। তিনি
স্রষ্টা আর বাকি সবই তাঁর সৃষ্টি। সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টির পর তিনি তাঁর নিয়ন্ত্রণ, রণাবেণ ও প্রতিপালন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে তিনি কারো মুখাপেী নন। মহাবিশ্বের চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা-নত্র ইত্যাদি
সবই তাঁর নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের অধীন। অর্থাৎ যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টিজগতের সব কিছুই
একমাত্র তাঁর হুকুম-নির্দেশই মেনে চলছে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এটাকে মাধ্যাকর্ষণ আর
ইসলামের পরিভাষায় এটাই একত্ববাদ, অর্থাৎ স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির নিঃসঙ্কোচ আত্মসমর্পণ বা আনুগত্য।
অতএব, বৈজ্ঞানিকভাবে, বস্তুগতভাবে, আধ্যাত্মিকভাবে এবং সাধারণ মানবিক দৃষ্টিকোণ
থেকে তৌহিদ বা একত্ববাদের ধারণা সর্বজনীন, সর্বব্যাপী, চিরন্তন ও প্রকৃত (Real Truth) সত্য।
কাবা শরিফের নিকট সমবেত হলে এ উপলব্ধি স্বতঃই হৃদয়ে সঞ্চারিত হয়। পৃথিবীর সব প্রান্ত
থেকে সব বর্ণ-গোত্র-জাতি ও ভাষার নারী-পুরুষ একত্র সমবেত হয় পবিত্র কাবার প্রাঙ্গণে।
চক্রাকারে নির্মিত কাবা শরিফের চারপাশ প্রদণি করে আল্লাহর অস্তিত্ব, মাহাত্ম্য ও একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে সবাই মহান স্রষ্টার কাছে নিজেদেরকে নিঃশেষে সমর্পণ করে দেয়।
পৃথিবীর সব মায়া-মমতা, লোভ-লালসা, চাওয়া-পাওয়া ও পার্থিব সব মায়াবী ছলনা উপো করে নিজেকে মহান স্রষ্টার উদ্দেশে সমর্পণ করে দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘লাব্বায়েকা
আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক; লাব্বায়েকা লা শারিকা লাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, কোনো শরিক নেই তোমার, আমি হাজির, নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই,
আর সব সাম্রাজ্যও তোমার, কোনো শরিক নেই তোমার।
পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে মুমিন মুসলিমগণ কাবার সন্নিকটে এসে উদাত্তস্বরে ঘোষণা দেয়
হে মহান স্রষ্টা, আমি জাগতিক সব মায়া ত্যাগ করে তোমার কাছে হাজির হয়েছি। তুমি এক, অদ্বিতীয়, মহামহিম, সব প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং সব কিছুর মালিক ও অধিপতি একমাত্র তুমিই। অর্থাৎ মহান স্রষ্টার মহত্ত্ব ও একত্ব ঘোষণা করে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে তার হৃদয়ের সব আকুতি প্রকাশ করে।
আদি মানব আদম আ: ও হাওয়া আ:-কে সৃষ্টির পরমহান আল্লাহ জান্নাতে বসবাসের অনুমতি দেন। জান্নাতের সব নিয়ামত প্রদান করে শুধু একটিমাত্র বৃরে নিকটবর্তী হতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে আদম-হাওয়া আ: উভয়েই আল্লাহর হুকুম বিস্মৃত হয়ে ওই নিষিদ্ধ বৃরে নিকটবর্তী হয়ে সে বৃরে ফল আস্বাদন করেন। আল্লাহর নিষেধ অমান্য করায় আল্লাহ তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন এবং শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
এর দ্বারা মানুষের কৃতকর্মের ফল মানুষকে যে ভোগ করতে হয়, সে শিাই মহান সৃষ্টিকর্তা
মানবজাতিকে প্রদান করেছেন। এ পবিত্র স্থানে আদি মানব ও প্রথম নবী আদম আ: বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং এ স্থানই আখেরি ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও সর্বোত্তম মানুষ মুহাম্মদ সা:-এর প্রিয় জন্মভূমি। মক্কা নগরীতে বায়তুল্লাহ শরিফ বা পবিত্র কাবা অবস্থিত। ‘বায়তুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর ঘর। কাবা শরিফ দুনিয়ার প্রাচীনতম ও পবিত্রতম ইবাদতগাহ। আদি মানব আদম আ: দুনিয়ায় আসার পর আল্লাহর ইচ্ছায় ফেরেশতা জিব্রাইল আ: কর্তৃক দেখিয়ে দেয়া নির্দিষ্ট স্থানে ইবাদতগৃহ নির্মাণ করেন। দুনিয়ায় এটাই প্রথম মসজিদ, যা ‘বায়তুল্লাহ’ বা কাবা শরিফ। আদম আ: ও তার বংশধরগণ এ ঘরেই সালাত বা নামাজ আদায় করতেন। পরে নুহ আ:-এর সময় যে মহাপ্লাবন হয়, তাতে কাবাগৃহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীকালে আল্লাহর হুকুমে মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইব্রাহিম আ: তার পুত্র ইসমাইল আ:-কে সাথে করে ওই একই স্থানে কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ করেন। কাবাগৃহের অদূরে অবস্থিত ‘জাবালুল কাবা’ পর্বত থেকে পাথর সংগ্রহ করে সেগুলো একটির পর একটি স্থাপন করে পৃথিবীর ওই প্রথম ইবাদতগাহ পুনর্নির্মিত হয়।
ওই সময় থেকেই হজের রেওয়াজ চালু হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানগণ প্রতি
বছর জিলহজ মাসে কাবা শরিফে সমবেত হয়ে হজ পালন করেন।
সারা দুনিয়ার মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সময় কাবাকে কেবলা, অর্থাৎ কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে। হজ ও ওমরা পালনের সময় হাজীগণ সাতবার কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন। কাবার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটা গোলাকারভাবে নির্মিত। গোলাকারভাবে নির্মিত হওয়ার কারণ হলো, এটি পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এবং এটা মুসলিম
মিল্লাতের কেবলা। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায়
ও সেজদা করতে হয়। কাবা শরিফে নামাজ আদায়কারীগণও কাবার চারপাশ ঘিরে কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ান। কাবাকে বায়তুল্লাহ শরিফ বা আল্লাহর ঘর বলা হয়। মহান স্রষ্টার আরশের নিচেই এর অবস্থান। এ পবিত্র স্থানকে স্বয়ং আল্লাহ শান্তি ও নিরাপত্তার স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
অতএব, এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলিম- হৃদয়ে কাবার অবস্থান হৃৎপিণ্ডের মতো, তার অনুভবও হৃদস্পন্দনের মতোই গভীর ও অতলস্পর্শী। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর
ঘোষণা : ওরা কি দেখে না আমি হারমকে (কাবার চতুষ্পার্শ্বস্থ নির্ধারিত এলাকাকে হারম বলা হয়) নিরাপদ স্থান করেছি।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৭আংশিক)।
কাবার মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : ‘মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ
প্রতিষ্ঠিত হয় তা তো বাক্কায় (মক্কার অপর নাম বাক্কা) এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী।
এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, (যেমন) মাকামে ইব্রাহিম, এবং যে কেউ সেখানে
প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর
উদ্দেশ্যে ওই গৃহে গিয়ে হজ করা তার ওপর ফরজ এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে (সে
জেনে রাখুক) আল্লাহ বিশ্বজগতের কারো মুখাপেী নন।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ৯৬-৯৭)।
আল কুরআনে অন্য আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন : ‘সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম।’ (সূরা বাকারা, ১৫৮ নম্বর আয়াতের প্রথমাংশ)। শুধু ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে পবিত্র মক্কা নগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তাই নয়; ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকেও মক্কা নগরী মানবসভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। আদম আ: থেকে আখেরি নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: পর্যন্ত পৃথিবীতে যত নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে, তারা সবাই কোনো না কোনো সময় পবিত্র মক্কা নগরীতে এসে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করেছেন।
মক্কা নগরী যেমন আদি মানব আদম আ:-এর প্রথম বসতিস্থল, তেমনি আখেরি নবীরও
জন্মভূমি। আদম আ: যেমন প্রথম মানুষ তেমনি প্রথম নবীও। তারই মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর
মনোনীত দ্বীন পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেন। দুনিয়ার প্রথম ইবাদতগাহ বায়তুল্লাহ বা কাবা
শরিফ এ মক্কা নগরীতে আদম আ: নির্মাণ করেন এবং পরবর্তীকালে ইব্রাহিম আ: তা পুনর্নির্মাণ করেন। এ মক্কা নগরী থেকেই আল্লাহর দ্বীনের আলো পৃথিবীর সর্বত্র ক্রমান্বয়ে
ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর হজ পালনের জন্য সারা বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে বর্ণ-গোত্র, ধনী-
নির্ধন, ভাষা-অঞ্চল নির্বিশেষে মুসলিমগণ এখানে এসে মিলিত হয়। তাই আদিকাল থেকে মক্কা
নগরী ইসলামের প্রচার-কেন্দ্র ও বিশ্বমুসলিমের মহামিলন স্থল। কিয়ামত পর্যন্ত কাবা নগরীর এ মর্যাদা অনু ও সমুন্নত থাকবে।
পবিত্র মক্কা নগরীর বায়তুল কাবায় অবস্থিত হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর), মাকামে ইব্রাহিম, সাফা- মারওয়া, রাসূলুল্লাহ সা:-এর জন্মস্থান, জাবালে নূর (হেরা পর্বত), মিনা, আরাফাত ইত্যাদি সবই অতি পবিত্র ও বরকতময় নিদর্শন। সমগ্র বিশ্বমুসলিম পরম
ভক্তিভরে সর্বদা এগুলো স্মরণ করে ও একান্তভাবে তা দর্শনের প্রত্যাশা হৃদয়ে পোষণ
করে।
এ পবিত্র নগরী মক্কা থেকেই ইসলামের আলো বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামের প্রথম নবী আদম আ:-এর মাধ্যমে ইসলামের আলো এখান থেকেই সর্বপ্রথম প্রজ্বলিত ও প্রচারিত হয় এবং আখেরি নবীর জমানায় এখান থেকেই সারা বিশ্বে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। জাহেলিয়াতের অন্ধকার বিদূরিত হয়ে মানবজাতি সত্য, ন্যায় ও মানবতার চিরায়ত আদর্শে আলোকিত ও উজ্জীবিত হয়। আজো সেই কাবার রোশনাই ও হেরার জ্যোতি পৃথিবীবাসীকে মহামুক্তির নবদিগন্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আহ্বান করছে।
হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘কাবা শরিফে নামাজ পড়ার সাওয়াব সাধারণ মসজিদে পড়ার তুলনায় এক লাখ গুণ বেশি।’ কাবা শরিফে মহান স্রষ্টার উদ্দেশ্যে মস্তক অবনত করে সিজদা করার সময় মনে হয়, এটাই সে স্থান যা পৃথিবীর হৃদয় বা কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত, মহান স্রষ্টার আরশের নিচে অবস্থিত এ স্থানে আদি মানবের প্রথম বসতি গড়ে উঠেছিল, মহান স্রষ্টার নির্দেশে তাঁর আরশের ছায়ার নিচে মানবজাতির প্রথম ইবাদতগাহ (বায়তুল্লাহ শরিফ) নির্মিত হয়, এটাকেই কেবলা করে সমগ্র মুসলিম জাতি মহান স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়।
মুমিনের হৃদয়ে কাবার অবস্থান বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। এর সাথে ঈমান, আকিদা ও আবেগের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে কাবার এ অবস্থান রয়েছে। তবে অনেকেই তা অনুভব করে না। কেবল বিশ্বাসীরাই তা উপলব্ধি করতে পারে। তাই কাবার অবস্থান বিশ্বাসীদের হৃদয়ের গভীরে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসীরাই জয়যুক্ত হয়। অবিশ্বাসীরা হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পথের নিশানা হারিয়ে ফেলে। অন্য দিকে অন্ধকারের গভীর তিমিরাবরণ ভেদ করে বিশ্বাসের আলো শেষ পর্যন্ত মুত্তাকিদের হৃদয়ে ও পৃথিবীকে উজ্জ্বল আলোকধারায় পরিস্নাত করে। কালো পাথরে নির্মিত কাবার হৃদয় থেকে হেরার জ্যোতির্ময় আলো যুগ যুগ ধরে মানবজাতিকে শাশ্বত সত্য, কল্যাণ, শান্তি ও মানবতার আলোকিত পথের সন্ধান দিয়েছে।
বর্তমান সমস্যা-সঙ্ঘাত ও অশান্তিপূর্ণ পৃথিবীতে এ শাশ্বত সত্য ও চিরন্তন আলোই আগামী দিনের পৃথিবীকে মানুষের জন্য শান্তি ও কল্যাণের আবাসভূমিতে পরিণত করে তুলবে।
পৃথিবির গোল্ডেন রেশিও কেন্দ্র কাবা?
এই বিশ্বভ্রম্মান্ডের প্রতিটি বস্তুর নিখুঁত অবকাঠামোগত মান হচ্ছে ১.৬১৮
পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছুর মধ্যেই গোল্ডেন রেশিও (Golden Ratio) বা স্বর্গীয় অনুপাতটি আছে।
মানুষের মুখের দৈর্ঘ্যের সাথে নাকের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১৮(প্রায়)।
মানুষের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে কুনুইয়ের দৈর্ঘ্য এবং কব্জি থেকে কুনুইয়ের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১৮(প্রায়)।
মানুষের নাভি থেকে পায়ের পাতার আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত এবং নাভি থেকে মাথা পর্যন্ত অনুপাত ১.৬১৮(প্রায়)।
এভাবে মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গই “গোল্ডেন রেশিও বা স্বর্গীয়” অনুপাতে গঠিত।
শুধু তাই নয়, শামুখের খোলস, ঘুর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন, মুরগীর ডিম, বৃক্ষের কান্ড বিন্যাস, মানুষের হৃদপিণ্ড, DNA, ফুল, মাছ, গাছপালা, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি সবকিছুতেই স্রষ্টা শুধুমাত্র ১.৬১৮ মান ব্যবহার করেছেন। আর সেই অনুপাতই হল “স্বর্গীয় অনুপাত”।
পবিত্র নগরী মক্কার নাম সমগ্র কুরআনে মাত্র একবার উল্লেখিত হয়েছে সুরা আল-ইমরান এর ছিয়ানব্বই আয়াতে।
এই আয়াতে মক্কা শব্দটি উচ্চারিত হওয়া পর্যন্ত বর্ণ সংখ্যা হচ্ছে ২৯ টি এবং সমগ্র আয়াতে
রয়েছে ৪৭ টি বর্ণ।
এখন আমরা যদি উক্ত আয়াতটি লিখে ফাইমেট্রিক্স (ফাইমেট্রিক্স হচ্ছে এক ধরনের সফটওয়্যার যার দ্বারা কোন ছবির গোল্ডেন রেশিও পয়েন্ট মাপা হয়) আর এটাই হচ্ছে গোল্ডেন রেশিও পয়েন্ট Φ এর মান।
এছাড়া, আমরা জানি আল্লাহর ঘর কাবা হজ্জ্বের স্থান মক্কা থেকে উত্তর মেরু ৭৬৩১৬৮ কিমিএবং মক্কা থেকে দক্ষিন মেরুর দূরত্ব ১২৩৪৮৩২ কিমি। ভাগফল দাড়ায় ” ইউনিক গোল্ডেন নাম্বার ১.৬১৮” (প্রায়)
সুতরাং গোল্ডেন রেশিও অনুপাত থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে সহজে আসতে পারি যে, সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা একজন এবং তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহ।