কীভাবে কম্পিউটাররা ইন্টারনেটে বিভিন্ন কাজ করে থাকে?
কীভাবে কম্পিউটাররা ইন্টারনেটে বিভিন্ন কাজ করে থাকে?
আমাদের প্রায় সবারই মনে কমন কিছু প্রশ্ন থাকে যেগুলোর উত্তর আমরা সহজে মেলাতে পারিনা। উত্তর মেলাতে গেলেও কেমন যেন এক গোলকধাঁধাঁর মধ্যে পড়ে যাই। ঠিক তেমনই এক অষ্টম আশ্চর্যের নাম হল এই ইন্টারনেট। আজ সংক্ষেপে এ নিয়ে কিছু আলোচনা করব; যেন সবার মনের গভীরে জমে থাকা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
ইন্টারনেট হলো Interconnected Network এর সংক্ষিপ্ত রুপ। যেটা “ইন্টারনেট প্রটোকল সুইট” ব্যবহারের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের একাধিক ডিভাইসকে সংযুক্ত করে। আমরা ছোটবেলায় অনেকেই হয়ত পড়েছি, “ইন্টারনেট হলো Net বা এক প্রকার জাল”। হুমম, ঠিক তাই। জাল যেমন প্রত্যেকটা পয়েন্টের সাথে প্রত্যেকটা পয়েন্ট জুড়ে থাকে, তেমনি ইন্টারনেটও অনেকগুলো ডিভাইস কানেক্টেড থেকে কাজ করে। এটাকে আমরা “নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক”ও বলতে পারি। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে অসংখ্য কম্পিউটার একটা আরেকটার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আর এভাবেই আমরা ঘরে বসেই পুরো বিশ্বকে পেয়ে যাই হাতের মুঠোয়।
দ্বিতীয়ত আমাদের জানা উচিৎ, “এই ইন্টারনেটের কাজটা আসলে কী?”
ইন্টারনেটের কাজটা আসলে খুব সহজ। সে শুধু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তথ্য বা ডাটার আদান এবং প্রদান করে। যে মেশিন বা ডিভাইস গুলো একত্রিত হয়ে ইন্টারনেট তৈরি করেছে তাদের প্রধান কাজই হলো ডাটা আদান আর প্রদান। যার ফলে এখন আমাদের আর পোষ্ট অফিস বা ফোন-ফ্যাক্সের দোকানে ভিড় জমাতে হয়না। চোখের পলকেই ঘটে যায় সবকিছু।
এখন আমরা জানবো, “কানেক্টেড কম্পিউটারগুলো ইন্টারনেটে কী ধরণের কাজ করে?”।
পুরো ইন্টারনেট জুড়ে শতশত মিলিয়ন কম্পিউটার রয়েছে। এরা প্রত্যেকেই কিন্তু একই কাজ করে না। এদের মধ্যে কিছু কম্পিউটার শুধু তথ্য সংগ্রহ করে রাখে। আর এই ডিভাইস গুলোকে বলা হয় সার্ভার। কোন তথ্য কোথাও থেকে অনুরোধ করা হলে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক এরকমভাবেই যে মেশিন গুলো কোন ডকুমেন্ট স্টোর করে রাখে তাদের বলা হয় ফাইল সার্ভার। যে সার্ভার গুলো আপনার আমার মেইল ধারণ করে রাখে, এদের বলা হয় মেইল সার্ভার। এবং যে সার্ভার গুলো ওয়েবপেজ ধারণ করে রাখে তাদের বলা হয় ওয়েব সার্ভার। ইন্টারনেটে মিলিয়ন মিলিয়ন সার্ভার রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই এখন সবার মনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠতে পারে, “সার্ভার কী?”
সার্ভার মূলত একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম। যেটা অন্যান্য সাধারণ কম্পিউটার প্রোগ্রাম থেকে বিশেষ এক প্রোগ্রাম এবং অন্য যেকোনো কারো কম্পিউটার কে বিভিন্ন কাজের সুবিধা দিয়ে থাকে। আর, এছাড়াও অন্যদিক থেকে বলতে গেলে বলা যায়, এটা হচ্ছে এমন একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডার যেখানে ওয়েবসাইটগুলোর সমস্ত তথ্য যেমন টেক্সট, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকে। প্রত্যেক ওয়েবসাইটের জন্য একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা সংবলিত সার্ভারে একটি নির্দিষ্ট পরিমান জায়গা থাকে। আমরা যখন কোন নির্দিষ্ট তথ্য খুঁজতে ওয়েবসাইটকে অনুরোধ করি তখন সার্ভার নির্দিষ্ট তথ্যটি ব্যবহারকারীকে পাঠিয়ে দেয়। এটাই সার্ভারের কাজ।
যে কম্পিউটারটি সার্ভার প্রোগ্রাম রান করে তাকে সার্ভার কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে। প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে সার্ভার বিভন্ন রকমের হতে পারে । যেমন,. FTP Servers, Database Servers, NNTP Servers ইত্যাদি যেগুলো আমরা উপরেই ধারণা পেয়েছি আশা করি।
এখন আমরা জানবো, “ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?”
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কম্পিউটারগুলো নিজেদেরকে প্রথমত বিভিন্ন ধরণের স্থানীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করে। স্থানীয় কম্পিউটারের এই নেটওয়ার্কগুলো পরবর্তীতে আরেকটি নেটওয়ার্কের সাহায্যে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয় এবং সেই নেটওয়ার্কটিই হলো ইন্টারনেট।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই, প্রথমত একটি কম্পিউটার নিজস্ব মডেম বা LAN এর মাধ্যমে কোন একটি ISP (Internet Service Provider) বা ইন্টারনেটের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে এবং সেই আইএসপির মাধ্যমে সে নিজেকে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করে।
আরেকটু যদি সহজ ভাবে বিশ্লেষণ করতে চাই; তাহলে বলতে পারি, একটি পিসি বা LAN যে ISP’র সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে, সেই ISP টি আবার বৃহত্তর কোন ISP’র সাথে সংযুক্ত। এবং ISP’র এ ধারাবাহিকতায় কোন দেশ বা অঞ্চলের বৃহত্তম যে ISPটি পাওয়া যাবে তা সাধারণত কোন ফাইবার অপটিক ব্যাকবোনের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ধরণের ব্যাকবোনগুলো উচ্চতম গতির অপটিক্যাল-ফাইবার তার (যা কিনা সমুদ্র তলদেশে অবস্থিত!) বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত। এবং এভাবেই দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর দুই বিপরীত প্রান্তে অবস্থিত দুটি বা ততোধিক কম্পিউটার অনায়াসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
ইন্টারনেটের এই বিস্ময় আমাদের দিয়েছে বেগ, করেছে হতবাক। Internet তার এই Net বা জাল দিয়ে একটা Virtual World তৈরি করে রেখেছে। কেমন যেন একটা মোহ বা মায়াজালে আটকে আছি সবাই। ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের একটা মূহুর্তও যেন চলে না।