ডার্ক ওয়েব কী?
সাধারণ মানুষ ইন্টারনেটে যা সার্চ করতে পারে তাকে ওপেন ওয়েব বলে। মানে ধরুন ফেসবুক, ক্যোরা এগুলো ওপেন ওয়েব সাইট। মজার ব্যাপার হল ইন্টারনেটর মাত্র ১% এই ওপেন ওয়েব।
তবে আপনি যদি আপনার সেটিংস বদলে ফেলেন এবং আপনার প্রোফাইলকে সার্চ ইঞ্জিনের আওতায় বাইরে রাখেন সে ক্ষেত্রে আপনার প্রোফাইল ডীপ ওয়েবের আওতায় চলে আসবে। মানে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে যে তথ্য বা ওয়েবসাইট আপনি খুঁজে পাবেন না তাই ডীপ ওয়েবর আওতায় আসে। যেমন ধরুন আপনার ব্যাংক একাউন্টের তথ্য, আপনার ইমেইল গুলো এগুলো ডীপ ওয়েবে ফেলা যায়। এগুলো ইন্টারনেটেই আছে কিন্তু সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। কিন্তু এগুলো কোন ভাবেই বেআইনি নয়। অনেকে ডীপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব এক জিনিষ ভাবে কিন্তু দুটো আলাদা।
তাহলে ডার্ক ওয়েব কী?
আপনারা হয়েতো Tor এর নাম শুনেছেন। এটার দ্বারা আপনি আপনার পরিচয় গোপন করে ইন্টারনেটে বিচরণ করতে পারবেন। এই টর মার্কিন নৌবাহিনী তৈরী করেছিল। এটা তারা তৈরী করেছিল কারণ যুদ্ধের সময় সামরিক তথ্য আদান প্রদানের সব পন্থা নষ্ট হয়ে গেলে তারা সাধারণ ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাতে সুরক্ষিত ভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
টর ব্রাউজারের হোমপেজ।
এবার Tor Hidden Services ব্যবহার করে আপনি গোপন ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারেন। সাধারণ ওয়েব সাইটের শেষে যেমন .com, .org, .in, .us থাকে সেরকম এই গোপন ওয়েবসাইট গুলোর শেষে .onion থাকে। টরের আরাক নাম আনিয়ান রাউটার কারণ এখানে একজনের পরিচয় পেঁয়াজের খোসার মতো একের পর এক লেয়ারের পিছনে লুকানো।
টর নেটওয়ার্কে বিভিন্ন কম্পিউটার আছে যারা আপনার হয়ে ওয়েব সাইট রিকোয়েস্ট করে। এই রিকোয়েস্ট বিভিন্ন কম্পিউটারে রিলে হয়ে এবং সার্ভার ভাবে এটা অন্য জায়গা থেকে আসছে।
তো এই গুপ্ত ওয়েবসাইট গুলো কেবল মাত্র টর ব্যবহার করে খোলা যায় এবং যদি আপনি ওয়েবসাইটের নাম না জানেন সে ক্ষেত্রে টর ব্যবহার করেও এই ওয়েবসাইট আপনি খুলতে পারবেন না। এই কারণে অসামাজিক ব্যক্তিরা গুপ্ত ওয়েবসাইট খুলে তাতে অনৈতিক এবং অসামাজিক কাজ করে যেমন ড্রাগ বেচা, বন্দুক বেচা, মানুষ বেচা এরকম হরেক রকম বস্তু বেচা যা সাধারণ ভাবে বেআইনি। এই ধরনের ওয়েবসাইটগুলো ডার্ক ওয়েবের আওতায় আসে।
বেচা কেনা ছাড়াও জঙ্গি এবং উগ্রপন্থীরা ফেসবুকের মত ওয়েবসাইট বানিয়ে তাতে তথ্য আদান প্রদান করে। হামলা বা নাশকতার ছক বানায়। এগুলোও ডার্ক ওয়েবের আওতায় আসে।
তবে টরের অনেক ভালো ব্যবহার আছে। চিন, ইরানের মতো দেশে ইন্টারনেট কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে অনেকে টর ব্যবহার করে। জার্নালিস্টরা তাদের সোর্সের সঙ্গে সুরক্ষিত ভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে ব্যবহার করে টর।
তার মানে ইন্টারনেটে যে সব সাইটগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয় এবং তা ব্যবহার করা হয় অনৈতিক কাজকর্ম করতে সেগুলোকে ডার্ক ওয়েব বলে।
ছবিগুলো গুগল ইমেজর মাধ্যমে নেওয়া।