দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে কী হয়?
দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধই একমাত্র তরলজাতীয় খাবার, যেখানে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। প্রোটিন, ফ্যাট আর কার্বোহাইড্রেটের দারুণ এক ‘মিক্সচার’ হলো দুধ। তাই যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য দুধ উপকারী।
অন্যদিকে আনারসে ভরপুর ভিটামিন সি। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসের দারুণ এক উৎস। দেশেই প্রচুর চাষ হয় বলে গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায়ই আনারস সহজলভ্য।
তবে এই দুই খাবার একসঙ্গে পাকস্থলিতে গেলে কি রেসলিংয়ের ট্যাগ টিমের মতো যৌথ প্রয়াসে আমাদের নাকাল করতে উদ্যোগী হয়? বিজ্ঞান এ বিষয়ে কী বলে? বারডেমের সাবেক প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো বলেন, ‘দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে মানুষের মৃত্যু হয়—কথাটির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এটি নিতান্তই প্রচলিত কুসংস্কার।’
যুক্তি হিসেবে তিনি কাস্টার্ডের কথা বললেন। এতে অন্যান্য ফলের সঙ্গে আনারস তো থাকেই, সঙ্গে থাকে দুধ। আবার আইসক্রিম কিংবা মিল্কশেকেও আনারসের সঙ্গে দুধ ব্যবহার করা হয় অহরহ। এসব খাবার খেলে মৃত্যু তো দূরে থাক, ছোটখাটো সমস্যার অভিযোগও কেউ করেছেন বলে শোনা যায় না।
আনারসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। এ কারণে আনারস খেলে অনেকের অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে অনেকেই দুধ হজম করতে পারেন না। ফলে বদহজম বা পেট খারাপ হয়। দুধে ল্যাকটোজেন নামের একটি উপাদান থাকে। অনেকের পেটে এই ল্যাকটোজেন সহ্য হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ল্যাকটোজেন অসহনশীলতা বলা হয়।
অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, এই সমস্যাগুলোও দুধ আর আনারস একসঙ্গে খাওয়ার জন্য তৈরি হয় না। সমস্যাগুলো দেখা দেয় আমাদের শারীরিক কিছু সমস্যা বা সীমাবদ্ধতার কারণে।
তাহলে মৃত্যুর ভুল ধারণাটি কীভাবে এল? প্রশ্নটির উত্তরে পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো শোনালেন এক লোককাহিনি। আনারস সাধারণত ঝোপঝাড়ের মধ্যেই হয়। আর ঝোপ মানেই সাপের আনাগোনা। প্রচলিত আছে, একবার এক বিষধর সাপ আনারসের ঝোপে ঘাপটি মেরে ছিল। কোনোভাবে সেই সাপ আনারসের গায়ে বিষ ঢেলে দিয়েছিল। এরপর সেই বিষাক্ত আনারস খেয়ে ফেলেন এক ব্যক্তি। এর পরপরই চুমুক দেন দুধের গ্লাসে। ব্যস, খানিক পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ফলে লোকজন ধরে নেয়, আনারসের পর দুধ পান করায় তিনি প্রাণ খুইয়েছেন এবং তারপর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে সেই কুসংস্কার—আনারস আর দুধ একসঙ্গে খেয়েছেন তো মরেছেন!