ধরুন,আপনি লিফটে আছেন। হঠাৎ লিফট ছিঁড়ে নিচে পড়তে থাকলে কী করবেন?
প্রশ্নটিই পদার্থ বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঠিক থাকলেও প্রকৌশলবিদ্যার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উত্তরটি সম্পূর্ণ আলাদা।
আপনার কি মনে হয় না এই প্রশ্নটিই প্রকৌশলীদের মাথায় অনেক আগেই এসেছিল? আর তাইতো অনেক আগে থেকেই প্রায় সব লিফটে ইমারজেন্সি সেফটি মেকানিজম রয়েছে যা মুক্ত বেগে পতন ঠেকাতে অত্যন্ত কার্যকর এবং প্রমাণিত। লিফটের সবগুলো কেবল ছিড়ে গেলেও এটি মুক্ত বেগে কখনোই পড়বেনা কারণ এই সেফটি মেকানিজম পুরোটাই মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং এটির কার্যকারিতা লিফটে বিদ্যুৎ থাকা বা না থাকার উপর নির্ভর করে না। তো দেখা যাক মেকানিজমটা কেমন?
লিফট এবং বিল্ডিং এর দেয়ালের সংযোগস্থলে যে রেইল থাকে তার সাথে ই এই স্বয়ংক্রিয় ব্রেক ব্যবস্থাটি কাজ করে। মেকানিজম তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করলে এটাকে গাড়ির সিট বেল্ট এর সাথে অনায়াসে তুলনা করা যায়। কখনো গাড়ির সিট বেল্ট যদি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে দেখবেন সিটবেল্ট ই আপনি যখন আস্তে টানছেন তখন এটি অনায়াসে চলে আসে কিন্তু একটু দ্রুত বেগে টানার চেষ্টা করলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। কারণ এর ভেতরে রয়েছে এক ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে একটি মেকানিক্যাল ডিস্ক এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে ল্যাচ যা কেন্দ্রবিমুখী বল এর মাধ্যমে উঠানামা করতে পারে। পদার্থ বিজ্ঞান অনুযায়ী কেন্দ্রবিমুখী বল সরাসরি নির্ভর করে চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান বস্তুর কৌণিক গতিবেগ এর উপর। যখন কৌণিক গতি বেগ বেড়ে যায় তখন এই কেন্দ্রবিমুখী বল ল্যাচ্ টিকে কেন্দ্র থেকে দূরে সরিয়ে দেয় যার ফলে এটি অন্য আরেকটি খাচ এর মধ্যে ঢুকে যায় এবং লক হয়ে যায়।
তাই গাড়ির সিট বেল্ট বা লিফট উভয় ক্ষেত্রেই এই সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর মেকানিক্যাল সিস্টেম এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে ব্যবহারকারীকে রক্ষা করতে পারে।
এছাড়াও আধুনিক সব লিফটে র নিচে পর্যাপ্ত ক্ষমতা র শক আবসরবার রয়েছে যাতে কোনো কারণে ও উপরোক্ত সিস্টেম ফেল করলেও এই পড়ন্ত বস্তুর গতিবেগ জনিত ইম্প্যাক্ট টি ম্রিয়মান করা যায়।