নতুন চাকরির প্রথম দিনে নিজেকে কিভাবে পরিচয় করানো যায়?
নতুন চাকরির প্রথম দিনে নিজেকে কিভাবে পরিচয় করানো যায়?
নতুন অফিসে প্রথম দিন নিজেকে উপস্থাপন করার গুরুত্ব আমরা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারিনা। সহকর্মীদের সঙ্গে প্রথম পরিচয় পর্বের এই দিনটি ইতিবাচক হলে সবার প্রিয়পাত্র হতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার ফল বইতে হতে পারে যতদিন সেখানে চাকরি করবেন ততদিন। কাজ শুরুর আগে অফিসে পা দেওয়ার মুহুর্ত থেকেই সহকর্মীরা আপনার সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে চেষ্টা করবে। আর এই ধারণাই কর্মক্ষেত্রে আপনার সুনাম কিংবা দুর্নাম দুটোরই পথ পথিকৃত হবে। তাই প্রথম দিন নিজের পরিচয় আর ব্যক্তিত্ব তুলে ধরার বিষয়টা অত্যন্ত সংবেদনশীল।
এই সংবেদনশীল মুহুর্তটাকে ইতিবাচক করে তোলার কিছু উপায় জানানো হলো লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের আলোকে।
সময়ানুবর্তীতা: সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে একাধিকবার শুনেছেন, তারপরও তা বারবার তুলে ধরার গুরুত্ব রাখে। ঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে সবাইকে বোঝাতে পারবেন নিজের কাজকে আপনি কতোটা গুরুত্ব দেন এবং আপনার সময়ানুবর্তীতা বজায় রাখার কৌশলটা শক্তিশালী। আরও ভালো হয় কিছুক্ষণ আগে পৌছানো, যাতে নতুন পরিবেশে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার বাড়তি সময় পান।
উপযুক্ত বেশভুষা: বাহ্যিক চাকচিক্য দেখেই আপনার প্রথম বাছবিচার হবে, এটাই নির্মম সত্য। তাই নতুন কর্মক্ষেত্রে পরিপাটি পোশাক পরে গেলে আপনার পেশাজীবী ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে। অনেক অফিস তাদের কর্মীদের ‘ফরমাল’ বেশভুষা পরতে বাধ্য করে না, তবে তাতে তার প্রয়োজনীয়তা কমে না মোটেই। আপনার বেশভুষাই নির্ধারণ করবে কর্মক্ষেত্রে অন্যরা আপনাকে কতোটা গুরুত্ব দেবে। আর আপনার বেশভুষা আপনার ব্যক্তিত্বেরই একটি অংশ, সেকথা মনে রাখতে হবে।
ইতিবাচক আচরণ: কর্মস্পৃহায় উদ্দীপ্ত আচরণ নতুন কর্মস্থলে অবশ্যই ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে। সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগ দেওয়া, বন্ধুসুলভ আচরণ ইত্যাদি প্রথম দিন থেকেই পরিবেশ সহজ করে তুলবে। প্রাথমিক অবস্থাতেই উপর্যুপরি কাজের চাপ পড়লে নিজেকে বিভ্রান্ত মনে হতে পারে। তবে কাজে হাল না ছাড়ার মানসিকতা দেখাতে পারলে দিন শেষে ব্যর্থতার চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
সামাজিকতায় জোর দেওয়া: পদমর্যাদা যতই বড় বা ছোট হোক না কেনো, অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের দিনটিতে সামাজিকতা বজায় রাখা আপনার কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। চেষ্টা করতে হবে নিজেই আলাপ শুরু করার। নাম পরিচয় জানা, কুশল বিনিময়, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের সাধারণ বিষয়গুলো জানতে চাওয়া এগুলোই হবে প্রথম পদক্ষেপ। আর অন্যদের সম্পর্কে জানার পাশাপাশি নিজের সম্পর্কেও জানাতে হবে। এভাবেই ধীর পায়ে সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
কাজের আগ্রহ প্রকাশ: কাজের নির্দেশ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে নিজেই কাজ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা দেখাতে হবে। উর্ধতন কর্মকর্তাকে খুঁজে নিয়ে জেনে নিতে হবে কাজের পরবর্তী ধাপ কি, কোনো প্রশ্ন থাকলে জড়তা কাটিয়ে ঘটনার রেশ থাকতেই প্রশ্নটি করে ফেলতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় কাজ শিখে নেওয়া কোনো সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। আপনার কাজের আগ্রহ একসময় নজরে আসবে যা পদোন্নতির পথ সুগম করতে অকল্পনীয় মাত্রায় কার্যকরী হবে।
অঙ্গভঙ্গিতে সতর্কতা: প্রথম পরিচয় পর্বে অঙ্গভঙ্গি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে। মানুষ নিজের অজান্তেই অপরের অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ করে। আর অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে শব্দ ব্যবহার না করেই সামনেই মানুষটিকে বুঝিয়ে দেওয়া যায় আমাদের মাঝে কোথাও না কোথাও একটা মিল আছে। মৃদু হাসিঝড়া মুখভঙ্গি, সঠিক করমর্দণ, সামান্য চোখাচোখি ইত্যাদি সবকিছুই কাজে আসে। অঙ্গভঙ্গি থাকতে হবে আত্ন-নির্ভরশীল এবং শান্ত।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান: যেকোনো প্রতিষ্ঠানে যোগদানের আগে তা সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য জেনে নিতে হবে নিজের চেষ্টায়। কর্মরত অবস্থাতেও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খবর জানতে হবে, শুধু নিজের বিভাগে মুখ গুঁজে থাকলে চলবে না। এতে উর্ধতন কর্মকর্তা আপনার কাজের গন্ডির বাইরের কোনো পরামর্শ চাইলে তাকে সাহার্য করতে পারবেন। এই সামান্য সাহার্যটুকুর প্রতিদানে আপনি পেয়ে যেতে পারেন আশাতীত কিছু।