ফলের দোকানদাররা আপেলের গায়ে এক ধরনের স্টিকার লাগিয়ে রাখে কেন?
আপনি কি কখনো দোকানে গিয়ে অবাক হয়ে ভেবেছেন যে এত রকমের আপেল দেখা যাচ্ছে কেন ? আপনি হয়তো দেখতে পাবেন লাল,সবুজ সহ হরেক রকম আর আকৃতির আপেল । বর্তমানে পৃথিবীতে রয়েছে প্রায় সাত হাজার পাচশোর কাছাকাছি আপেলের প্রজাতি, আর এই বিশাল বৈচিত্রের প্রধান কারন হচ্ছে মানুষের নতুন কিছু উদ্ভবের নিরলস প্রচেষ্টা ।
ফলের উৎপাদন ও প্রজনন হচ্ছে চাষি ও ক্রেতাদের চাহিদা মেটানোর একটি ভাল উপায়, তাদের জন্য, যারা একটি আপেলের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট খোজেন ।
একদিকে, চাষিরা হয়তো আশা করেন এমন একটি আপেলের প্রজাতি যেটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি আর সহজে মজুদ করা যায় । আরেকদিকে ক্রেতারা চান এমন একটি আপেল যেটি সুস্বাদু, দেখতে লোভনীয় ও মজাদার । তাই এগুলোর বংশ বৃদ্ধি ঘটানোর সময় এর ফলন কিরুপ হবে থেকে শুরু করে এটি খেতে কেমন লাগবে,দেখতে কেমন হবে এসব কিছুর কথাই মাথায় রাখতে হয় বিশেষজ্ঞদের । আর অনেক সময় নিখুত জিনিসটি খুজে বার করার অর্থই হচ্ছে নতুন কিছু একটা খুজে বের করা ।
আর এই নতুন প্রজাতি বের করার জন্য তাদেরকে প্রথমে খুজে বের করতে হয় সেই গুন সম্পন্ন উৎপাদক গাছের জোড়া, যারা এই বৈশিষ্ট গুলো সম্পন্ন । পিতা ও মাতা গাছ বাছাই করার পর বসন্তে ফুল ফোটার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ।
এরপর পিতৃ গাছ থেকে পরাগ নিয়ে মাতৃ গাছের মূকূলে স্থাপন করার হয় ক্রস পলিনেশন নামে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে । এই মূকূলটি যখন আপেলে পরিণত হয় তখন তা থেকে বীজ সংগ্রহ করে রোপন করা হয় । এই বীজ গুলোর পূর্ণবয়স্ক আপেল ধারনে সক্ষম গাছে পরিণত হতে সময় লাগে পাচ বছরের মত ।
কিন্তু বৈশিষ্ট যেভাবে ছড়ায় সে অনুসারে এই বীজগুলো থেকে বড় হওয়া গাছগুলোতে তাদের পিতামাতার এই নির্দিষ্ট গুনগুলো থাকবে এলোমেলো অবস্থায়,তাদের জীন গুলো থাকবে ভিন্ন ভিন্ন । তাই উপযুক্ত গুন সম্পন্ন প্রজাতিটি পাবার জন্য প্রয়োজন হয় অনেক ধৈর্যের । আর এই বীজ গুলোর যেটির ফল সেই আকাঙ্ক্ষিত গুন ধারন করে,যা হয় সাধারণত প্রতি পাচ হাজার বীজের মধ্যে মাত্র একটি, তখন সেটিকে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় এবং এদের কে অন্য খামারে পাঠানো হয় দেখার জন্য যে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়া ও মাটির ধরন এদের ফলনে কিরুপ প্রভাব ফেলে । একই সাথে এই গাছটির ফল্গুলো থেকে পাওয়া বীজগুলোও পরখ করে দেখতে হয় যে তাদের মধ্যে বৈশিস্টের স্থায়িত্ব ও সামঞ্জস্য কেমন থাকে তা জানার জন্য ।
প্রজননবিদরা আপেলের মধ্যে প্রায় ৪৫টির মত গুন আছে কিনা তার উপরে এই বীজগুলো থেকে হওয়া গাছ বাছাই করেন । যেমন ফলের গঠন, পেকে গেলে এর অবস্থা ও সামঞ্জস্য, এর রসে চিনির পরিমাণ কি রকম একই সাথে এটি কতক্ষন ভাল থাকে এসবের উপর ভিত্তি করে আপেল গাছগুলো আলাদা করে ফেলা হয় এবং রেখে দেয়া হয় শুধু মাত্র সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ফল ধারণকারী গাছ গুলো ।
বেশ কয়েক বছরের মধ্যে এই বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয় । আর পরীক্ষা ও বাছাই শেষে পাওয়া যায় নতুন এক রকমের আপেল যা তার আগের প্রজন্মের থেকে শেষ্ঠতম আর এর অবিকল প্রতিরুপ বজায় রাখার জন্য সব গুলো গাছ পেতে হয় সেই নিখুত ফল ধারণকারী গাছটি থেকে । এটির ডাল কেটে তা থেকে কলম করে ফলানো হয় সায়ন,যা পরে আর একটি গাছ, যেটিকেও বাছাই করা হয়েছে তার শক্তিশালী মূল ও উৎপাদন ক্ষমতার জন্য, তার মুলে এই সায়নকে স্থাপন করা হয় । এভাবেই এই ফিউশন করে তৈরি হয় একটি আকাঙ্ক্ষিত আপেল গাছ যার ফলন শুরু হতে লাগে প্রায় চার বছরের মতন ।
আপেলের বংশবৃদ্ধির এই প্রক্রিয়াটি কঠিন হলেও তা রয়েছে সবার নাগালের মধ্যেই । বিশ্ব বিদ্যালয়, কোম্পানি, এমনকি কেউ নিজস্ব উদ্যোগেও শুরু করতে পারেন নতুন ধরনের আপেল গাছ উৎপাদনের এই প্রক্রিয়া । এই প্রকিয়ার শেষ ও বেশ কঠিন একটি ধাপ হচ্ছে নাম করন যেটিকে অবশ্যই হতে হয় এমন যা উৎপাদকের মালিকানার চিহ্ন হয়ে থাকে ।
আর যে কোম্পানি বা কৃষক একটি ধরনের আপেল উৎপাদন করেন এভাবে, তার ব্র্যান্ড লোগ আপেলের গায়ে ছোট স্টিকার আকারে থাকে।