ফুচকা-এর ইংরেজি কী?
ফুচকার লাগসই ইংরেজি প্রতিশব্দ খোঁজার কোন দরকার আছে কি? ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, তামিল, উর্দু যে নামেই ডাকা হোক না কেন স্বাদে গন্ধে ফুচকা নিজ গুণেই মহিমান্বিত।
রাস্তার পাশে মাঠে, ময়দানে, পার্কে ফুচকার দুর্নিবার আকর্ষণে সকল বয়সের মানুষ ফুচকাওয়ালার কাছে ভিড় জমায়। বিশেষ করে মহিলাদের জান পোতা বাড়তি ঝাল ও তেঁতুল দিয়ে তৈরি ফুচকায়।
প্লেটে সাজানো ঢাকার আকর্ষণীয় ফুচকা
দক্ষিণ ভারতে হরিয়ানা এবং কোন কোন জায়গায় পানিপুরি নামটা বহুল প্রচলিত। উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সে panipuri নামটাই ইংরেজি বলে চালিয়ে দিলে কেউ চ্যালেঞ্জ করবে না। চ্যালেঞ্জ করবেই বা কেন? বছর কয়েক আগে, ২০০৫ সালের ১০ই মার্চ অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি লেক্সিকো ডটকমে পানিপুরি জায়গা করে নিয়েছে।
কলকাতায় ফুচকা চাট
কলকাতায় ফুচকার বিরাট স্তূপ
ইংরেজিতে একেবারেই যে আলাদা নাম নেই তা নয়। তবে তাতে ফুচকার একটি নাতিদীর্ঘ বর্ণনা পাওয়া যায় Indian puff-pastry balls filled with a watery and spicy mixture. এটাকে ইংরেজি প্রতিশব্দ বলে চালানো যায় না। স্কুলের ইংরেজি টিচার ফুচকার রচনা লিখতে দিলে এ বর্ণনাটি কাজে লাগতে পারে।
ফুচকার চেহারা সুরত, যে সব উপকরণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয় তার বর্ণনা দিয়ে আরো বেশ কিছু নাম দেওয়া হয়েছে। যেমন, ‘watery bread’, ‘Crisp Sphere Eaten’ এবং ‘Indian Watery Ball’ ।
দক্ষিণ এশিয়ায় স্থানভেদে ফুচকার যে সব বাহারি নাম রয়েছে তার উপর দৃষ্টি দেয়া যায়।
হরিয়ানায় পানি পুরি পাতাসি, উত্তর প্রদেশে পানিকে বাতাসে,মধ্যপ্রদেশে ফুলকি,গুজরাটে পকোড়ি,ওড়িশা ছত্রিশগড়ে গুপ চুপ ( gup chup) বাংলা, বিহার, নেপাল, ঝাড়খন্ডে ফুচকা।
বাংলাদেশে ফুচকা নামটি স্থায়ী হয়ে গিয়েছে। সিলেট অঞ্চলে অবশ্য ফুসকা/ফুছকা নামটির একটুখানি উচ্চারণ জনিত ব্যতিক্রম।
হরিয়ানা পাঞ্জাব এবং অন্য কয়েকটি স্থানে ফুচকার নাম গোলগাপ্পা। রাজধানী দিল্লির চাঁদনী চক থেকে কনৌট প্লেস সর্বত্রই ফুচকার অবাধ বিচরণ। ফুচকার আকার ও খাওয়ার প্রক্রিয়ার সংমিশ্রণে নামটি চালু হয়েছে। গোলগাল খোলসের মধ্যে পুরি ভর্তি ফুচকা গপ করে পুরোটাই মুখে চালান করে দেওয়ার কারণে নাম হয়েছে গোলগাপ্পা।
পাকিস্তানের গোলগাপ্পা
পাকিস্তানের সর্বত্রই গোলগাপ্পা নামটি বহুল পরিচিত। প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পী আহাম্মদ রুশদির অতি জনপ্রিয় ‘গোলগাপ্পা ওয়ালা’ সিনেমার গানটি লোকের মুখে মুখে ফেরে। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মোহাজর অধ্যুষিত করাচি শহরে তাদের সাথে নিয়ে আসা নাম পানিপুরি, ফুলকি ইত্যাদি নাম বলে জানেন।
পানিপুরি গোলগাপ্পা দিল্লি
ফুচকা উপমহাদেশকে মজিয়ে এখন বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে চলেছে। লন্ডন, বার্মিংহাম, লিডস, ম্যানচেস্টার ও অন্যান্য শহরে হানা দিয়েছে। লন্ডনে বিভিন্ন লোকেশনে বেশ কয়েকটি পানিপুরি শপ ইতোমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে।
লন্ডনের মজাদার পানিপুরি
এশিয়ান মাগাজিনে লন্ডনের ফুচকার ছবি
আমেরিকাও পিছিয়ে নাই। উপমহাদেশের ইমিগ্র্যান্ট অধ্যুষিত নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন শহরেও ফুচকা স্ট্রীট ফুডের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
নিউইয়র্কে দুটো লোভনীয় ফুচকার ডালি
ইউরোপের উত্তর প্রান্তে উত্তর মেরু ঘেঁষে সুদূর ফিনল্যান্ডেও মারাঠি সম্প্রদায়ের কল্যাণে ফুচকা পৌঁছে গেছে। বছর কয়েক আগে সেমিনারে অংশ নিতে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি শহরে ফুচকার স্বাদ উপভোগ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তবে, আমাদের দেশে হরেক রকমের মালমশলাসহ কারুকার্য করে যেভাবে ফুচকা তৈরি করা হয় সেখানে তাদের মেনু কিছুটা ভিন্ন। ফুচকার আসল মজা ঝাজ ও ঝাল দুটোরই স্বল্পতা লক্ষ্য করা গেল।
ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি শহরে পানিপুরি
এত জনপ্রিয় ফুচকার কখন এবং কোথায় জন্ম তা এখনো রহস্যাবৃত। যে মহান শিল্পীর মস্তিষ্ক থেকে ফুচকা বানাবার রেসিপি এসেছে তার নামটাও সে রহস্যের আবরণে ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
ফুচকার উৎস নিয়ে দুটো ভার্সন পাওয়া যায়। একটার উৎস কিংবদন্তি অন্যটা ঐতিহাসিক।
কিংবদন্তি বলে মহাভারতের যুগে পঞ্চপান্ডব যখন বনবাসে দিন কাটাচ্ছিলেন আহারাদির জন্য উপকরণের বড্ডই অভাব চলছিল। তাঁদের মাতা কুন্তী এসব সামান্য উপকরণ দিয়ে কিভাবে তার পুত্রদের সামাল দিতে পারবেন তা পরীক্ষা করার জন্য নব বিবাহিতা দ্রৌপদীকে খাবারের পর যেটুকু তরকারি অবশিষ্ট ছিল এবং মাত্র একটা পুরি বানানো যায় সে পরিমাণ ময়দা দিয়ে বললেন, আমার পুত্রদের রসনা তৃপ্তির জন্য খাবার তৈরি করে দাও। কি জানি কেন, সব যুগেই শাশুড়িরা পুত্রবধূদের কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেন। কিংবদন্তি বলে, এভাবে দ্রৌপদীর হাতেই ফুচকার প্রাথমিক ভার্সন আলোর মুখ দেখে।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয় ফুচকা কিংবা গোলগাপ্পার পূর্বসূরী ফুলকি মগধে প্রথমে আলোর মুখ দেখে। তবে, তখন ফুচকার জন্য পুরি তৈরি করার উপকরণ এখনকার মত ছিল না। পুরির দুটো গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ আলু এবং মরিচ দুটোই এ উপমহাদেশে এসেছে মাত্র ২০০-৩০০ বছর আগে। কার্তিকেয়া শংকর নামে এক ভদ্রলোক গুগোলে লিখেছেন, পুষ্পেশ পন্থ নামে খাদ্যের ঐতিহাসিক মনে করেন ১০০-২০০ বছর আগে বিহার অঞ্চলে পুরির উৎপত্তি হয়। তার মতে, রাজকাচুরির ছোট সংস্করণ বানিয়ে পুরি ভর্তি করে কেউ হয়তো খেয়ে মজা পান। বাকিটা ইতিহাস।
ছবি ও কিছু তথ্য: গুগোল ও ঊইকিপিডিয়ার সৌজন্যে