বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল না বলে আমরা আয়তন কেন বলি? আর আয়তনের একক হচ্ছে ঘন। ক্ষেত্রফলের একক হচ্ছে বর্গ। এর ব্যাখ্যা কী?
বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল না বলে আমরা আয়তন কেন বলি
ভূমি পরিমাপের কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
- জ্যামিতিক পদ্ধতিতে
- প্লানিমিটার বা প্লাটোমিটার ব্যবহার করে
- মেসারিং হুইল এর মাধ্যমে
- গ্রাফ পেপারের সাহায্যে
- জিপিএস ব্যবহার করে
- এরিয়াল ফটোগ্রাফের সাহায্যে
প্রতিটি পদ্ধতির বিবরণ দিচ্ছি না, অনেক বড় হয়ে যাবে উত্তর। মজার বিষয় হলো সবগুলো পদ্ধতিই দুই মাত্রা ব্যবহার করে ভূমি মেপে থাকে।
দ্বিমাত্রিক পরিমাপে দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ব্যবহার করা হয়। এককথায় বলতে গেলে দুইটা মাত্রা ব্যবহার হবে, যেটা ক্ষেত্রফল পরিমাপে করা হয় আর বর্গ এককে প্রকাশ করা হয়।
ত্রিমাত্রিক পরিমাপে ব্যবহৃত হয় তিন মাত্রা অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা। আয়তন পরিমাপ করতে গেলে তিন মাত্রার প্রয়োজন হয় আর ঘন এককে প্রকাশ করা হয়।
(তথ্যসূত্রঃ Land Area Calculator or Measurement Methods: Planimeter, Geometric, Measuring Wheel Methods)
ভূমি পরিমাপের জ্যামিতিক পদ্ধতি নিয়ে সামান্য একটু আলোচনা করি যা বহু পুরাতন। যেই অঞ্চলের পরিমাপ করতে চাই সেই অঞ্চলকে ছোট ছোট ত্রিভুজে ভাগ করে নিয়ে প্রতিটির ক্ষেত্রফল বের করে সবগুলো যোগ করলেই হয়ে গেল। শুনতে সহজ হলেও কাজটা কিন্তু বেশ কঠিন।
(ছবিসূত্রঃ How is the area of a country calculated?)
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলঃ ১২১২ ×× ভূমি ×× উচ্চতা
এখানে আয়তন নির্ণয়ের ব্যবহৃত উচ্চতার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। দেখুন এখানে দুই মাত্রা ব্যবহার হচ্ছে- ভূমির দৈর্ঘ্য আর ত্রিভুজের শীর্ষ বিন্দু থেকে ভূমির দূরত্ব।
কিছুক্ষেত্রে ট্রাপিজিয়াম আকৃতিও ব্যবহৃত হতে পারে।
ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফলঃ ১২১২ ×× সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের যোগফল (a++b) ×× সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব(h)।
দেখুন এই ক্ষেত্রেও কিন্তু দুই মাত্রা ব্যবহার করা হচ্ছে।
এইতো গেল সুন্দর শেপের বিষয়, উল্টাপাল্টা শেপ হলেও অসুবিধা নেই।
জ্যামিতি দিয়ে ওরও দফারফা করে দেয়া যাবে। হ্যাঁ, অবশ্যই এটাও দ্বিমাত্রিক এবড়ো থেবড়ো হলেও।
আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠে থাকি। জায়গা জমির হিসাব নিকাশও হয়ে থাকে পৃথিবীপৃষ্ঠেই, কোনোভাবেই পৃষ্ঠের উপরে থাকা বায়ুমণ্ডল অন্তর্ভুক্ত নয়। আবার মাটির গভীরতাও ভূমির পরিমাপে ব্যবহৃত হয় না। তাহলে তো তিন মাত্রার প্রয়োজন কোনোভাবেই হচ্ছে না।
পৃষ্ঠতলের পরিমাপে দুই মাত্রার ব্যবহারের জন্যই একে বর্গ এককে প্রকাশ করা হয়। তাহলে ভূমির পরিমাপও যে বর্গ এককে হবে এই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু সমস্যা হলো দুই মাত্রার ক্ষেত্রে আমরা ক্ষেত্রফল শব্দটি ব্যবহার করলেও ভূমির ক্ষেত্রে কেন আয়তন ব্যবহার করছি?
এটি একটি বিতর্কিত বিষয়, মনে হয় ঘটনাটি ঐতিহাসিক ভুল। ক্ষেত্রফলের ইংরেজি area আর আয়তনকে ইংরেজিতে volume বলা হয়।
ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করতে গেলে দেখবেন কোন একটি দেশের ভূমির পরিমাপ বলতে গিয়ে ইংরেজিতে কোথাও ‘volume’ শব্দটি ব্যবহার করেনি, সর্বক্ষেত্রে ‘land area’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
কোন এক সময়ে হয়তো অনুবাদ করতে গিয়ে অনুবাদক দেশের ক্ষেত্রফলকে দেশের আয়তন বলে চালিয়ে দিয়েছে। উচ্চারণের সুবিধা, লেখার সুবিধা কিংবা শুনতেও বেশ ভালো লাগার জন্য হয়তো বিষয়টি ব্যাপকহারে প্রচলিত হয়ে গেছে।
অনুবাদের ভুল বলার পেছনে একটা যুক্তি দেখাতে পারি, গ্রাম অঞ্চলে কিংবা লিখতে পড়তে না জানা মানুষ আয়তন শব্দটি যথেষ্ট কমই প্রয়োগ করে থাকে, ‘কতোটুকু’ শব্দ দিয়েই তাদের কাজ চলে যায়।
একটা শব্দের অনেক রকম অর্থ থাকতে পারে, একজন অনুবাদকের পক্ষে কিন্তু ধরা মুশকিল মূল লেখক শব্দটিকে আসলেই কোন অর্থে ব্যবহার করেছিলেন।