মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কি কি?
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কি কি?
বর্তমান বিশ্বের প্রায় ১৯৫টি দেশেই মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে। আধুনিক যুগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ধিরে ধিরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এসব দেশে অনেকেই বিনা কারণে দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোনের আসক্তি চরম আকার ধারণ করছে। যেমন:
আমি একদিন রাস্তার চারমাথার মোড়ে দাড়িয়ে আমার বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অপেক্ষা করার সময় পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে বিনা কারণে অনলাইনে ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও দেখি আবার কখনো ফেসবুকের Reels ভিডিও দেখি। ভিডিও দেখার সময় রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে থাকার সময় আমার সামনে হঠাৎ একটি মোটরসাইকেল ও সাইকেল এক্সিডেন্ট হয়। তারপর এক্সিডেন্ট হওয়া মাত্র মোটরসাইকেল ও সাইকেলটি ছিটকে অল্পের জন্য আমার গায়ে লাগেনি। আল্লাহর রহমতে জীবনে বেচেঁ যাই (সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি)। তাই অযথা সময় নষ্ট করে মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়লে সেই সময়ের মধ্যে আপনার আমার মূল্যবান জীবনে কি ঘটতে পারে সেটা বলা মুশকিল।
তবে এর অর্থ এই নয় যে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা রয়েছে আবার বিনা করণে সময় অপচয় করলে জীবনের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।
যাইহোক, মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পক্ষে মানসিক চাপ হয় এমন সব সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে আজকের এই পোষ্টে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে অন্বেষণ করব। এছাড়াও এটির সঠিক ব্যবহারিক কৌশল সম্পর্কে জানিয়ে দিব।
শারীরিক স্বাস্থ্যের পক্ষে অযথা মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক কি?
চক্ষু
আমরা যখন দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল এর স্ক্রিনে দেখে থাকি। এতে করে আমাদের চোখ অল্প সময়ের মধ্যেই খারাপ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সেই জন্য প্রতি ২০ মিনিট পর পর কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্যে হলেও ২০ ফুট দূরে কিছু দেখা দরকার। এতে চোখের ক্লান্তি দূর হবে।
টেক্সট নেক
দীর্ঘ সময় আপনার মোবাইল এর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে আপনার ঘাড় থেকে শুরু করে মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাই চোখের স্তরে আপনার ডিভাইসটি ধরে রেখে ভাল ভঙ্গি বজায় রাখুন। এতে করে আপনার ঘাড়ের পেশী প্রসারিত করার জন্য বিরতি নিন।
ঘুমের সময় ব্যাঘাত হওয়া
মোবাইল ফোনের স্ক্রিন দ্বারা নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন (Melatonin) উৎপাদনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। আপনার রাতের ঘুমের সমস্যা প্রভাবিত করবে। সন্ধ্যাকালীন সময়ে এই ডিভাইসের নীল আলোর ফিল্টার চালু করুন এবং ঘুমানোর সময় রুটিন তৈরি করুন যাতে স্ক্রিন ব্যবহার জড়িত না হয়।
মোবাইল ফোনের আসক্তি
ডিজিটাল আসক্তি: বিনা কারণে অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার আসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় স্ক্রীন সময়ের সীমা নির্ধারণ করুন। এছাড়াও ব্যবহার ট্র্যাক করে এমন অ্যাপ ব্যবহার করুন। এতে আপনার শারীরিক দিক থেকে প্রযুক্তি-মুক্ত পেতে সময় নির্ধারণ করুন।
সামাজিক তুলনা: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি অবাস্তব কিছু জিনিস আপনার আমার মনকে উৎসাহিত করে, যা অপর্যাপ্ততার অনুভূতির দিকে পরিচালিত করে। সে জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যেগুলো এ্যাকাউন্ট অহেতুক মনে হবে সেগুলো আনফলো করে বাস্তব-জীবনের সংযোগগুলিতে ফোকাস করাই জরুরী৷
গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা:
তথ্য নিরাপত্তা: মোবাইল এর অ্যাপ্লিকেশানগুলির প্রতি সতর্ক থাকুন। কারণ নিয়মিত গোপনীয়তা সেটিংস পর্যালোচনা করুন৷ তাছাড়াও নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
সাইবার বুলিং
সাইবার বুলিং সম্পর্কে নিজেকে এবং অন্যদের শিক্ষিত করুন। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। এছাড়াও অনলাইন ক্রিয়াকলাপগুলী করতে পিতামাতার নিয়ন্ত্রণ বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করুন৷
সময় ব্যবস্থাপনা
মাল্টিটাস্কিং: আপনার মোবাইল ডিভাইসে একাধিক কাজ সময় ব্যবস্থাপনা হ্রাস করতে পারে। সে জন্য কাজগুলিকে অগ্রাধিকার দিন, সাথে অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করুন। কোনও বাধা ছাড়াই ফোকাসড কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন৷
মোবাইল অ্যাপ কাস্টমাইজ করুন
বিভ্রান্তি কমাতে আপনার মোবাইল অ্যাপ কাস্টমাইজ করুন। অপ্রয়োজনীয় সতর্কতাগুলি বন্ধ করুন। এছাড়াও জটিল সময়কালে “বিরক্ত করবেন না” বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করুন৷
পরিবেশগত প্রভাব
ইলেকট্রনিক বর্জ্য: মোবাইল ডিভাইসের ক্রমাগত টার্নওভার ইলেকট্রনিক বর্জ্যের অবদান রাখে। তাই সংস্কার করা ডিভাইস কেনার কথা বিবেচনা করুন, পুরানো ইলেকট্রনিক্সকে দায়িত্বের সাথে রিসাইকেল করে মেরামত করার মাধ্যমে আপনার বর্তমান ডিভাইসের আয়ু বৃদ্ধি করুন।
শক্তি খরচ
আপনার মোবাইল ফোনের স্ক্রীনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে শক্তি-দক্ষ সেটিংস ব্যবহার করে অফ-পিক আওয়ারে ডিভাইসগুলি চার্জ করার মাধ্যমে শক্তি খরচ হ্রাস করুন।
সবশেষে:
স্মরণ রাখবেন, মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। সে জন্য স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কৌশলগত দিক থেকে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক শারীরিক ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে। ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা কারণে মোবাইল ফোন আসক্তির শিকার না হয়ে আপনার মূল্যবান সময় কাজে লাগিয়ে আগামী প্রজন্মে উন্নতি করার চেষ্টা করুন।