সরকার কেন ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না?

সরকার কেন ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না?

Asked on October 12, 2023 in Accounting.
Add Comment
  • 1 Answer(s)

    যে কোনো দেশের নতুন টাকা ছাপার দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। আমাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন লি. টাকা ছেপে থাকে। দেশের মোট সম্পত্তি, জনগণের সংখ্যা, মোট আয়, সর্বমোট চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে টাকা ছাপানো হয়।

    অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইচ্ছেমতো টাকা ছাপালে সঞ্চয়ের মান কমে যাবে। কেউ ব্যাংকে টাকা রাখলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফা পাওয়া যায়। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা ছাপা হলে যে মুনাফা আসবে ততা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারবে না। টাকার মান কমে যাবে অর্থাৎ কেউ এক বছর আগে যে টাকা দিয়ে একটি জিনিস ক্রয় করতে পারতেন, নতুন নোট ছাপার ফলে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে তাকে সেই জিনিস কিনতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইবে না এবং এতে ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

    কেউ যদি ভেবে থাকেন অতিরিক্ত অর্থ ছেপে সরকার বিদেশীদের ঋণ পরিশোধ করতে পারে, এটিও সঠিক নয়। নতুন অতিরিক্ত টাকা ছাপার ফলে কারেন্সি রেট কমে যাবে। ফলে আগের চেয়ে আরও বেশি টাকা দিতে হবে।

    সম্পদের চেয়ে টাকার পরিমাণ বেশি থাকলে সে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় মুদ্রাস্ফীতি। অতিরিক্ত টাকা ছাপানো হলে যে মুদ্রাস্ফীতি হয় তাতে দেশে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে সরকার নানা দিকে বিবেচনা করে নতুন টাকার নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

    অতিরিক্ত টাকা ছাপার কুফল দেখা গিয়েছিল জিম্বাবুয়েতে। ২০০৮ সালের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের মাসিক মুদ্রাস্ফীতির সর্বোচ্চ হার নেমেছিল । মুদ্রাস্ফীতির আগে জিম্বাবুয়েতে একটি চকলেটের দাম ১ টাকা ছিল। মুদ্রাস্ফীতির পরে সেই চকলেটের দাম হয়েছিল ৭৯ বিলিয়ন ৬০০ মিলিয়ন। এর ফলে দেখা যেত লোকে ঠেলাগাড়ি কিংবা বস্তায় করে টাকা নিয়ে বাজারে যাচ্ছে। তখন জিম্বাবুয়ের সরকারকে বড় অঙ্কের নোট তৈরি করতে হয়েছিল।

    ভেনেজুয়েলাতেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। সরকার খাদ্যদ্রব্যের দাম কমানোর ফলে সেখানে দোকান থেকে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস শেষ হয়ে গিয়েছিল দ্রুত। কারণ সবার কাছে অতিরিক্ত টাকা ছিল।

    ১৯২০ সালে জার্মানিতে ঘটে যায় এক ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি। মানুষ ঠেলাগাড়ি ভরে টাকা নিয়ে যেত বাজার করতে। টাকার চেয়ে সে সময় ঠেলাগাড়ির মূল্য বেশি ছিল। ফলে মানুষ টাকা রেখে ঠেলাগাড়ি চুরি করতো।

    ১৯৪৬ সালে হাঙ্গেরিতে দৈনিক মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১৯৫%, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ দৈনিক মুদ্রাস্ফীতির হার।

    এতসব কারণে

    একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বেশি করে মুদ্রা ছাপানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। উৎপাদন বৃদ্ধি করাটাই এক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা। তাতে মুদ্রাস্ফীতি সীমিত পর্যায়ে থাকবে এবং দ্রব্যসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে।

    Answered on October 15, 2023.
    Add Comment
  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.